একে অপরকে অঙ্গ দান, রাখি পূর্ণিমায় নজির ভাই-বোনের
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে…। আমিও বাঁচি, তুইও বেঁচে থাক— দিল্লিতে পাঁচ ভাইবোনের এই শপথই এবার রাখিবন্ধনের সেরা ক্যাচলাইন। এক ভাই নিজের কিডনি দান করে বোনকে ‘সুন্দর ভুবন’-এ বাঁচিয়ে রাখলেন। অন্য আর দুই বোন তাঁদের লিভারের অংশ দিয়ে একমাত্র ভাইকে বাঁচিয়ে তুললেন। ভাই-বোনেদের এভাবে একে অপরকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা দেখে মুগ্ধ চিকিৎসকরা। মাথা নুইয়ে তাঁদের কুর্নিশ করেছে নেট দুনিয়াও।
দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন ৩১ বছরের এক মহিলা। তাঁর বাড়ি হরিয়ানার রোহতকে। সপ্তাহে কম করে ৩ বার ডায়ালিসিস করে কোনওরকমে বেঁচে ছিলেন তিনি। গত ক’দিন ধরে মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাও তলানিতে ঠেকে। হানা দেয় টিবি সহ একাধিক রোগ। তাঁকে ভর্তি করা হয় দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, কিডনি বদলানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। খোঁজ শুরু হয় ডোনারের। প্রথমে মহিলার স্বামী কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্লাড গ্রুপ। তাঁদের গ্রুপ ম্যাচ করছিল না। এর পর নিজের কিডনি দিয়ে দিদিকে বাঁচিয়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ভাই। বছর আটাশের যুবক তিনি। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন দিদি-ভাইয়ের ব্লাড গ্রুপ একই। ফলে নিয়ম মেনে মহিলার কিডনি প্রতিস্থাপনে উদ্যোগী হন চিকিৎসকরা। সফল হয়েছে অপারেশনও।
হাসপাতালের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর বিক্রম কালরা জানিয়েছেন, ওই মহিলার শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। কিডনি পরিবর্তন না করলে ওঁকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর কেটে গিয়েছে বেশ ক’দিন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই মহিলা বেশ ভালোই আছেন। তাঁর হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বেড়েছে। আগামী দিনে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে তাঁর কোনও অসুবিধা হবে না। দিদির পুনর্জন্মে খুশি কিডনি দাতা ভাই। তিনি এদিন বলেছেন, ‘দিনের পর দিন ওঁর কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিলাম না। দিদির এখন হাসিমুখ দেখে খুব ভালো লাগছে।’ উত্তরপ্রদেশের বদাউনের এক কিশোরের লিভার কাজ করছিল না। তার নাম অক্ষত।
চিকিৎসাতেও সাড়া দিচ্ছিল না সে। প্রি-কোমা স্টেজে চলে গিয়েছিল অক্ষত। তাকে ভর্তি করা হয় গুরগাঁওয়ের একটি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, যত দ্রুত সম্ভব কিশোরের লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। একমাত্র ভাইকে বাঁচানোর শপথ নেন দুই বোন নেহা ও প্রেমা। একজনের বয়স ২৯। অন্যজনের ২২। দু’জনেই তাঁদের লিভারের কিছুটা করে অংশ ভাইকে দান করেন। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ অরবিন্দর সইন শনিবার বলেছেন, ‘খুব জটিল অপারেশন ছিল। তবে, শেষ হাসি আমরাই হেসেছি। বর্তমানে তিন ভাইবোনই সুস্থ।’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, অক্ষতের প্রায় পুরো যকৃতটাই বদলে ফেলতে হয়েছে। সেই জায়গায় ঠাঁই পেয়েছে তার দুই দিদির লিভার। রবিবারই দেশজুড়ে রাখিবন্ধন। সেই উৎসব-আলো গায়ে মেখে নতুন জীবন উদ্যাপন করবে পাঁচ ভাইবোন। সুন্দর পৃথিবী আর মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার স্বপ্ন সার্থক হোক।