ধর্মীয় রাষ্ট্রের ধারণাকে বাতিল করতে হবেঃ মুসলিম ফোরাম
তালিবানদের আফগানিস্তান দখল নিয়ে দেশের কিছু মানুষের উচ্ছাস দেখে উদ্বেগে সুশীল সমাজ।
দ্য ইন্ডিয়ান মুসলিম ফর সেক্যুলার ডেমোক্র্যাসি গীতিকার জাভেদ আখতার এবং অভিনেতা শাবানা আজমী, নাসিরুদ্দীন শাহ সহ মোট ১২৮ জনকে দিয়ে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই দিব্যতন্ত্র অর্থাৎ সরকার পরিচালনায় ধর্মগুরুদের প্রাধান্যদানের বিরোধী তাঁরা।
এতে বলা হয়েছে, এটি আফগানিস্তানের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে ‘ইসলামিক ইমিরেটস’ -এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আরও বলা হয়েছে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এবং জামাত-ই- ইসলামি হিন্দের কর্মী সহ একাংশের মুসলমানদের মধ্যে আমরা এই নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেখছি তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বিবৃতি জারি করে বলেছে, তালিবানদের আফগানিস্তান দখল সম্পর্কে বোর্ড কোন প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিছু বোর্ড সদস্যের প্রতিক্রিয়াকে বোর্ডের মতামত হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান মুসলিম ফর সেক্যুলার ডেমোক্র্যাসির ওই বিবৃতিতে সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সিনেমা জগতের মানুষসহ বহু বিদ্বজন স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের মতো দেশে যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সেখানে অন্যদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে শরিয়াহ শাসন জারি করাকে সমর্থন জানানো নিছক সুবিধাবাদ এবং ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধরনের মানসিকতা পক্ষান্তরে হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণাকেই উৎসাহিত করে।
আইএমএসডি বিশ্বব্যাপী ইসলামী পণ্ডিত, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ক্রমবর্ধমান উপজাতির মতামতকে সম্মান করে যারা বলেন, “ইসলামী রাষ্ট্র” -র ধারণা ইসলামের মূল শিক্ষার বিরোধী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাদের মতে, ইসলামের মূল মূল্যবোধ ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার ধর্মীয় বহুত্ববাদের মৌলিক নীতির সাথে কোন বিরোধ নেই।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন যে ‘দখলদারদের ক্ষমতাচ্যুত করা এবং তাদের পুতুল সরকার উৎখাতকে স্বাগত জানানো এক কথা, কিন্তু যারা ইসলামের বর্বর সংস্করণ নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে তাদের জন্যে উৎযাপন অন্যরকম। এটি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দানবীয়করনকে সমর্থন করে।’
আইএমএসডি বিশ্বব্যাপী মুসলমান সম্প্রদায়গুলিকে আহ্বান জানিয়ে দাবি করেছিল যে তালিবানদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য “২৪/৭ আফগানিস্তান ওয়াচ” চালু করতে হবে এবং তা বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, এবার তারা আগের নিষ্ঠুর শাসনের বিপরীত। যেই শাসন একসময় আফগানিস্তানকে নরকের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, এবার তারা সকল নারী, পুরুষ এবং শিশুদের স্বাধীনতা এবং অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে।
এই সংগঠন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবিলম্বে ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন এবং ১৯৬৭ প্রটোকলে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানিয়েছে এবং সেই কনভেনশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার অনুরোধ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ধর্ম নির্বিশেষে ভারতকে অবশ্যই সমস্ত আফগান শরণার্থীদের জন্য তার দরজা খুলে দিতে হবে।’