বাক্স করে মধু উৎপাদনে রেকর্ড করল সুন্দরবন
সুন্দরবনের জঙ্গলে অনুকূল পরিবেশ এবং অন্যান্য কারণে এবার বাক্স করে রেকর্ড পরিমাণ মধু উৎপাদন করা সম্ভব হল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর সব মিলিয়ে ৬৫ টন মধু উৎপাদিত হয়েছে। গতবার এর পরিমাণ ছিল ৩৯ টন। গতবারের থেকে এবার অবশ্য অতিরিক্ত ২০০টি বাক্সে মধু চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এবার ১২০০টি বাক্সে মধু উৎপাদন হয়েছে।
গতবছর উম পুনের জেরে সার্বিকভাবে সুন্দরবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বাদ যায়নি সুন্দরবনের মধু চাষও। সাধারণত দুই থেকে আড়াই মাস লাগে বাক্সের মাধ্যমে মধু চাষ শেষ করতে। যে সময়ে বাক্সের মধ্যে মধু চাষের প্রক্রিয়া শেষ হয়, এবার সেসময় কোনও বড় দুর্যোগ বা বিপত্তি ঘটেনি। এছাড়া এবছর যেসব বিষয় এই বিপুল পরিমাণ মধু উৎপাদনে সাহায্য করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল জঙ্গলে ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি। ম্যানগ্রোভ গাছের ফুল থেকে মৌমাছির দল মধু সংগ্রহ করে বাক্সে এনে জড়ো করে।
আরেকটি বিষয় হল, গত বছর অনেকটা সময় পার করে এই চাষ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার সঠিক সময়ে অর্থাৎ, মার্চ মাসে তা শুরু হয়ে যায়।বনি ক্যাম্প, কলস, কুলতলি, ঝড়খালি সহ বেশ কিছু জায়গায় বাক্সগুলি রাখা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী যেসব জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়, তার আশেপাশে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত বসতি থাকবে না। এমনকী ধানখেত না থাকাও আদর্শ পরিবেশ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ ধানখেতে কীটনাশক ছড়ানো হলে মৌমাছির দল তার ত্রিসীমানায় আসে না। জঙ্গল ঘেরা পরিবেশের মধ্যে বাক্স খুলে রেখে দেওয়া হয়। গাছের ডালে মধুর চাক যেমন তৈরি করে মৌমাছির দল, তেমনই এক ধরনের চাক এই বাক্সের মধ্যে নির্মাণ করে তারা। আড়াই মাস পর বাক্স থেকে সেই মধু বের করে তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এতদিন পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই কাজ করছিল। এই বছর এই মধু উৎপাদনের সঙ্গে আরও দুটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে যুক্ত করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্তারা বলেন, মধু সংগ্রহ করার পর তার মান যাচাই করে প্যাকেজিং করা হয়। যেমন খলসি গাছের ফুল থেকে সবথেকে ভালো মানের মধু (Honey) পাওয়া যায়। সেগুলি আলাদা বটলিং করে সেভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়।