আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

কাবুল বিমানবন্দরের বিস্ফোরণে হত কমপক্ষে ৭২

August 27, 2021 | 2 min read

সতর্কতা আগেই দিয়েছিল আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশ ব্রিটেন। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত করে বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের  বাইরে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। ১২ মার্কিন সেনা সহ নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৭২। এক শীর্ষ আফগান আধিকারিক জানিয়েছেন, সেদেশের অন্তত ৬০ জন নাগরিকের  মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুও। জখমের সংখ্যা অন্তত ১৫০। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমেরিকার এক শীর্ষ সেনা আধিকারিক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে মার্কিন বাহিনীর ১২ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১১ জন মার্কিন মেরিন ও একজন নৌবাহিনীর চিকিত্সক। এছাড়া, আরও ১৫ জন মার্কিন সেনা গুরুতর জখম হয়েছেন। হামলাকারীদের কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর ব্যাপারে মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলসিকে অবগত করেছেন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। 


 এদিন বিকেলে কাবুল বিমানবন্দরের আবে গেট এবং ব্যারন হোটেলের সামনে পরপর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকঘণ্টা পর রাতের দিকে আরও দু’টি  বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী শহর। এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তার একটি দেখা যাচ্ছে, আবে গেটের সামনে থরে থরে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত দেহ। চারপাশে অসহায় মানুষের আর্তনাদ-হাহাকার।  এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিমানবন্দর সংলগ্ন ব্যারন ক্যাম্পে দেশ ছাড়তে আগ্রহী মানুষদের ভিড় ছিল। সেই ভিড়েই বিস্ফোরণ হয়। মার্কিন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দু’টির মধ্যে একটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। সূত্রের খবর, তালিবানের একটি  গাড়ি আইইডির সংস্পর্শে আসতেই তৃতীয় বিস্ফোরণটি হয়। ওয়াশিংটনের দাবি, এই হামলার পিছনে রয়েছে আইএস। রাতের দিকে হামলার দায় স্বীকারও করে নেয় ওই জঙ্গি সংগঠনটি। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মঘাতী জঙ্গির ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেছে আইএস।


 কাবুলের মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে গোলাগুলির শব্দও শোনা গিয়েছে। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান হোয়াইট হাউসের কন্ট্রোল রুমে। সেখানে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। শুক্রবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাপতালি বেনেটের সঙ্গে বাইডেনের বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তা বাতিল করা হয়েছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর। কাবুলে বিস্ফোরণের ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সন্ত্রাসের পাশাপাশি জঙ্গিদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও সকলকে একত্রিত হতে হবে। 


প্রায় প্রতিদিনই কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করছেন দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগান জনতা। কেউ কেউ তো বিমানবন্দরের আশপাশেই পাকাপাকি আস্তানা গেড়েছেন। তাঁদের জন্য অশনিসঙ্কেত দিয়েছিল ব্রিটেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী দপ্তরের মন্ত্রী জেমস হিপ্পে জানান, কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হওয়া জনতাকে নিশানা করেই বড়সড় হামলা চালানোর ছক কষছে আইএস জঙ্গিরা। ব্রিটিশ মন্ত্রীর মতোই কাবুলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী মারিস পেইনও। তিনি বলেন, ‘যেকোনও মুহূর্তে বিমানবন্দরে জঙ্গি নাশকতার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।’ উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এই একই আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ও ন্যাটো বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার ডেডলাইন ৩১ আগস্টের বেশি না বাড়ানোর ঘোষণা করতে গিয়ে বাইডেন বলেছিলেন, আইএসের আফগান শাখা ‘আইসিস- খোরাসান’ বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এর আগে গত বুধবার ব্রিটেনের ফরেন, কমনওয়েল্থ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) জানিয়েছিল, কাবুলের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক রয়েছে। তাই দেশ ছাড়তে উদগ্রীব ব্রিটিশ নাগরিক সহ অন্যান্যরা যেন সুরক্ষিত স্থানে সরে গিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করেন। রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে এফসিডিও বলে, ‘কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের দিকে কেউ যাবেন না। যদি আপনি বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় থাকেন, তাহলে অবিলম্বে সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করুন।’ মার্কিন নাগরিকদের জন্য একই নির্দেশিকা জারি করে বাইডেন প্রশাসনও। আশঙ্কা সত্যি করেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Blast, #Kabul Airport

আরো দেখুন