লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের দৌলতে পোস্ট অফিসে দৈনিক অ্যাকাউন্ট খোলায় দেশের শীর্ষে বাংলা
পোস্ট অফিসে দৈনিক নতুন অ্যাকাউন্ট খোলায় দেশে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলা। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। কেন্দ্রের ডাক বিভাগের তথ্যেই তার প্রমাণ মিলেছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল গেরুয়া শিবির। অথচ সেই প্রকল্পের দৌলতে ধুঁকতে বসা ডাক বিভাগ রীতিমতো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে প্রতিদিন যেভাবে পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে, তা আগে কখনও হয়নি বলেও ডাক বিভাগের কর্তারা স্বীকার করছেন।
পোস্ট অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার অ্যাকাউন্ট খুলে দেশে প্রথম স্থানে রয়েছে রাজ্য। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। সে রাজ্যে দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট খোলায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। তবে, কর্ণাটক, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে দৈনিক এক হাজার অ্যাকাউন্টও খুলতে পারছে না।
ডাক বিভাগের রানাঘাট সাব ডিভিশনের(পূর্ব) অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট উজ্জ্বল কুণ্ডু বলেন, যেসব জায়গায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চলছে সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে মহিলারা ভিড় জমাচ্ছেন। গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ মহিলার নিজেদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি ওই শিবিরে হাজির হয়ে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খুলতে তৎপর হয়েছে। পাশাপাশি আমরা পোস্ট অফিসের তরফেও গ্রাহকদের পরিষেবা দিতে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। গ্রামীণ এলাকায় ব্যাঙ্কের তুলনায় পোস্ট অফিসের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবে মানুষও পোস্ট অফিস সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। ফলে বাসিন্দারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট খুলতে এগিয়ে আসছেন। রাজ্যের মধ্যে নদীয়া জেলায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, আধার অ্যানাবেল পেমেন্ট সিস্টেমের(এইপিএস) মাধ্যমে যে কোনও ব্যাঙ্কের মতোই পোস্ট অফিসে আর্থিক লেনদেন সম্ভব। মূলত এই পরিষেবার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকরাও সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকা পোস্ট অফিস থেকে তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে আধার কার্ড, একটি চালু মোবাইল পোস্ট অফিসে নিয়ে আসলেই চলবে। বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিভাইস, মোবাইলে আসা ওটিপি আধার নম্বরের মাধ্যমেই এমন পরিষেবা পাওয়া সম্ভব। যদিও এক্ষেত্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা তোলা যাবে। এছাড়া নদীয়ার বেশকিছু পোস্ট অফিস ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে। তাই সীমান্তের মহিলারাও যাতে পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট খুলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন সেজন্য বাড়তি নজর দিচ্ছে পোস্ট অফিস।
যদিও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সমালোচনা বিজেপি করেই চলেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বারবার এই প্রকল্পকে ভিখারি বানানোর কৌশল বলে কটাক্ষ করছেন। তাঁর দলের নদীয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেন, তৃণমূল সরকার মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথম হতে চাইছে। আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চাই না। বেকারদের কর্মসংস্থান হলে তারাই সংসার চালাতে পারবে।
নদীয়া জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তৃণমূলের দীপক বসু বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শুধু দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী। তাই ওরা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির গুরুত্ব কী বুঝবে?