চাই স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টি, ভিয়েনঘরের ভোলবদল হচ্ছে রাজ্যে
অস্বাস্থ্যকরভাবে মিষ্টি তৈরির সংস্কৃতি থেকে যেন কিছুতেই বেরতে পারছেন না মিষ্টান্ন বিক্রেতারা। আর তাতেই মিষ্টিতে মিশছে ভেজাল। শরীর বিগড়ে গেলে কারিগর বা বিক্রেতাকে নয়, মিষ্টিকেই দুষছেন ক্রেতারা। মিষ্টির গা থেকে এই কলঙ্কের দাগ মুছতে এবার উদ্যোগী হলেন বিক্রেতারা। হুগলিতে মিষ্টি বিক্রেতাদের ডাকে এক কর্মশালার আয়োজন করা হল, যেখানে হাতেকলমে স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টি তৈরির উপায় বাতলালেন স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এফএসএসএআই) কর্তাদের দাবি, জেলায় জেলায় এই অভিযান চলবে। মিষ্টি বিক্রেতারাও দাবি করলেন, গড়তে হবে টেস্টিং ল্যাবরেটরি। কারণ সঠিক গুণমানের পরীক্ষা না হলে ভালো মিষ্টি তৈরি ও তার রপ্তানি থমকে যাবে।
চুঁচুড়ায় এদিনের কর্মশালায় হাজির ছিলেন জেলার মিষ্টান্ন বিক্রেতারা। জেলা ফুড সেফটি ইন্সপেকশন অফিসার বিশ্বজিৎ মান্না বলেন, মিষ্টি তৈরি করতে এফএসএসএআই লাইসেন্স দরকার। তা থাকলেও, তার নিয়ম বা বিধি মানতে অনেক সময় ঢিলেমি দেখা যায়। এমন ছোটখাট কিছু বিষয় আছে, যা এড়িয়ে যান মিষ্টান্ন উৎপাদকরা। আবার অনেক নিয়মকানুন তাঁদের অজানা। বাইরের জামাকাপড় ছেড়ে রাখা, সরাসরি মিষ্টিতে হাত না দেওয়া, পরিষ্কার বাসন, বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করা, মাথায় ক্যাপ পরার মতো বিষয়গুলি মেনে চলেন না অনেকেই। এতে মিষ্টি দূষিত হতে পারে। সব সময় যে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেজাল মেশানো হয়, তা নয়। এমন কিছু পদ্ধতিতে মিষ্টি তৈরি হয়, যেখানে ভেজাল ঢুকে যায়। মিষ্টিতে রং ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কী রং ব্যবহার হবে, সেই বিষয়ে ধারণা নেই অনেকেরই। আরও একটি সমস্যা হয়, মিষ্টি তৈরির কাঁচামাল সংরক্ষণ নিয়ে। কোন পদ্ধতিতে কাঁচামাল রাখলে মিষ্টির স্বাদ অটুট থাকে, সেই বিষয়গুলি অজানা অনেকেরই। আমরা কর্মশালায় এই বিষয়গুলি দেখভালের কৌশল শিখিয়েছি। এরপর আমরা নিয়মিত মিষ্টির দোকানগুলিতে নজরদারি চালাব। প্রতিটি জেলায় এভাবেই মিষ্টান্ন শিল্পের ভোলবদলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
স্বতন্ত্র হুগলি মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শৈবাল মোদক বলেন, একটি সাধারণ ব্যাপার হল, যে হাতে ক্রেতাকে মিষ্টি দেওয়া হয়, সেই হাতেই টাকা নেওয়া হয়। যেহেতু ছানা ও দুধের মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করি, তাই আমাদের বেশি সাবধান হওয়া দরকার। এদিকে নজর না দিলে স্বাস্থ্যকর মিষ্টি উৎপাদন করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার দিনভর যে কর্মশালা চলল, তাতে আমরা অনেকটাই স্পষ্ট ধারণা পেলাম। সংগঠনের সহ সভাপতি অমিতাভ দে বলেন, আমাদের জেলায় কোনও টেস্টিং ল্যাবরেটরি নেই। প্রায় কোনও জেলাতেই নেই। কলকাতায় থাকলেও, সেখানে সব সময় যাওয়া সম্ভব নয়। অথচ টেস্টিং না হলে সঠিক গুণমান বিচার করা সম্ভব নয়। জেলায় জেলায় যে উচ্চমানের কারিগর আছেন, তাঁরা অসাধারণ স্বাদের মিষ্টি তৈরি করতে পারেন। পরিকাঠামোর দিক থেকেও এখন অনেক উন্নত হয়েছে জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। তাই এখানকার মিষ্টিও রাজ্যের বাইরে, এমনকী দেশের বাইরে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার ল্যাবরেটরি। আমাদের দাবি, হুগলিতে একটি টেস্টিং ল্যাব তৈরি হোক। তাহলে মিষ্টির মান আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।