১১৩ পুরসভার বকেয়া মোট ৫০ কোটির বিদ্যুতের বিল মেটাল রাজ্য
কোনও পুরসভার বিদ্যুৎ বিল বাকি ছিল এক কোটি টাকার, কোনও পুরসভার ৫০ লক্ষ। সব মিলিয়ে রাজ্যের ১১৩টি পুরসভার মোট ৫০ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মেটাল রাজ্য সরকার। তবে প্রতি বছর পুরসভাগুলির বিপুল অঙ্কের বিদ্যুতের বিলের বোঝা কমাতেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার। এজন্য সৌরশক্তি ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেই বলেন, অন্ততপক্ষে শহরগুলিতে স্ট্রিট লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সোলার সিস্টেমকে কাজে লাগালে, বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কম হবে। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে সমস্ত পুরসভার বিদ্যুতের বকেয়া বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি ছিল বাঁকুড়া পুরসভার। এছাড়া আরামবাগ পুরসভার সাড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা, রানাঘাট পুরসভার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা, বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৪ লক্ষ টাকা, তাহেরপুর পুরসভার প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটানো হয়েছে।
রানাঘাট পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর সরাসরি পুরসভাগুলির বিদ্যুৎ বিল মেটায়। নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর পুরসভা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তার বিল কখনওই পুরসভার পক্ষে মেটানো সম্ভব না।
জানা গিয়েছে, বর্তমানে সব পুর এলাকাতে স্ট্রিট লাইট ব্যবহারের জন্য পৃথক মিটার রয়েছে। এছাড়াও শহরের পানীয়জল সরবরাহের জন্য একাধিক পাম্প চলে। তাছাড়া কমিউনিটি হল, একাধিক পার্ক, সুইমিং পুল, আরবান হেলথ সেন্টার, পাবলিক টয়লেট, বাস স্ট্যান্ড, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, পুরসভা ভবন ইত্যাদির জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক মিটার।
২০১৫ সালের আগে পুরসভাগুলি নিজস্ব তহবিলের অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করত। সেই সময় পুরসভার লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলেও, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ দপ্তর পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করতে পারত না। কারণ তাতে দপ্তরের কর্মীরা রোষের মুখে পড়তেন। এরপর ২০১৫ সালে বিধানসভায় একটি বিল পাস হয়। তাতে উল্লেখ থাকে, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর পুরসভাগুলিকে প্রতি আর্থিক বছরে জেনারেল ফান্ড বরাদ্দ করার আগে, ডব্লিউবিএসইডিসিএলকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে। পুরসভার বিদ্যুৎ দপ্তরে ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই বলেন, ওই সময় বিদ্যুৎ দপ্তর কার্যত নিজেদের স্বার্থে মন্ত্রীদের বুঝিয়ে ওই বিল পাস করিয়েছিল। বর্তমানে ওই নিয়মেই সরাসরি রাজ্যের তরফে পুরসভাগুলির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মেটানো হয়। পরে জেনারেল ফান্ডের বাকি টাকা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেইমত কোন পুরসভার জন্য কত টাকা বিদ্যুৎ বিল বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে, সেই তালিকা সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির কাছে পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ দপ্তরের দেওয়া বিলের টাকার অঙ্ক পুরসভাকে মিলিয়ে নিতে হয়।
অন্যদিকে আরামবাগ সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভা ইতিমধ্যেই বিদ্যুতে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যদিও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, সোলার প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে রাতের শহরকে আলোকিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে রাজ্যের বিকল্প শক্তি ভবনের ছাড়পত্র পাওয়াটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু লাল সুতোর বাঁধনে সেই উদ্যোগ এখন চাপা পড়ে রয়েছে। তাছাড়া প্রযুক্তিগত কারণেও সোলার সিস্টেমের ব্যবহার থমকে রয়েছে।