রাজস্থান নয়, চানাচুরের উৎপত্তি বাংলায়, উঠল জিআই স্বীকৃতির দাবি
সম্প্রতি চিরাচরিত বাঙালি জলখাবার চানাচুরের জিআই দাবি করেছে বাংলা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে চানাচুর কি আদেও বাংলার সৃষ্টি নাকি ভিনরাজ্য থেকে আমদানি তার! এসব বিতর্কের মাঝেই জেনে নিন শতাব্দী প্রাচীন চানাচুরের ইতিহাস।
বৈদিক যুগ থেকেই ঋষি মনীষীদের দানা শস্যের ওপর ঝোঁক ছিল। বাংলায় আজও যেমন জন্মের পর ষষ্ঠী বলে একটি অনুষ্ঠান পালিত হয়, এমনি মঙ্গল কাব্যে জন্মের পরে অষ্টকলাই বলে একটি উৎসব উজ্জাপনের উল্লেখ আছে। মূলত অষ্ট দেবতাকে খুশি করতে তাঁদের উদ্দেশ্যে আট রকমের দানাশস্য উৎসর্গ করা হত। সেখানে বাদাম ভাজা, ছোলা ভাজা, ডাল ভাজার মতো দানা শস্য থাকত। অর্থাৎ সেই সময় থেকেই বাংলায় চানাচুরের সব রকম উপাদান পাওয়া যায়। ১৮৬৮ সালে দশরথ অমৃতলাল বসুর লেখা তাঁর আত্মকথা বইটিতেও এর উল্লেখ আছে। ‘সন্ধ্যায় প্রতিদিন আমাদের চানাচুরওয়ালা ডাক পেরে যেতেন’। অর্থাৎ ১৮৬৮ সালেই অষ্টকলাই থেকে চানাচুর আলাদা পরিচিতি পেয়ে গেছে। পরবর্তীকালে ১৮৭৩ সালে বাংলায় পাঁচমিশালী চানাচুরের উল্লেখ মিলেছে। কিন্তু চানাচুরের রেসিপি লিখিত হিসাবে প্রথম পাওয়া যায় ১৯২৪ সালে। ১৯৩৭ সালে প্রথম বিকানির থেকে বাংলায় আসে ভুজিয়াওয়ালা। অর্থাৎ ভুজিয়াওয়ালা বাংলায় ভুজিয়া বিক্রি করতে আসার ১০০ বছর আগে থেকে বাংলা চানাচুর খাচ্ছে। বিহার, রাজস্থান নয় বাংলাতেই প্রথম চানাচুর তৈরি হয়েছে।
বাদাম, ছোলা, ডাল, গাঠিয়ার সাথে আমচুর সহ নানা মশলা মিশিয়ে তৈরি হয় বাংলার চানাচুর। বাড়তি স্বাদ আনতে অনেকেই কিসমিস, কারি পাতা দিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ উপাদানই বেসনের। কিন্তু ভিনরাজ্যে চানাচুরের বেশিরভাগ উপাদানই ছাতু দিয়ে তৈরি হয়। মশলার পরিমাণও সেই তুলনায় অনেক কম থাকে। যদিও বাংলার বাজার ধরতে তারাও এখন পাঁচমিশালী চানাচুর তৈরি করা শুরু করেছে। শতাব্দী প্রাচীন এই জল খাবার তৈরির এখন বাংলার মোট ৫ লক্ষ মানুষের জীবিকা। এছাড়াও বিভিন্ন লোকাল ট্রেনে প্রায় ৫ হাজার হকার চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।