সংসদে দাঁড়িয়ে কটাক্ষ করেছিলেন এই প্রকল্পকে, একশো দিনের কাজই মুখরক্ষা করল মোদীর
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টিকে নরেন্দ্র মোদী খোঁচা দিয়েছিলেন—‘গর্ত খোঁড়া প্রকল্প’। আর করোনা পর্বে সেই ‘গর্ত খোঁড়া’ অর্থনীতি আঁকড়েই খানিকটা স্বস্তি পেল তাঁর সরকার। এপ্রিল থেকে জুন—চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০.১ শতাংশ। অর্থাৎ, অর্থনীতির শাপমুক্তির আভাস। এই পরিসংখ্যানকে রেকর্ড বলেই দাবি করছে কেন্দ্র। কিন্তু নেপথ্যে? মনমোহন সিং জমানার ১০০ দিনের কাজ এবং গ্রামীণ অর্থনীতি। অথচ, গত অর্থবর্ষে প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার কত ছিল? মাইনাস ২৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ, পরিসংখ্যানগতভাবে মাইনাস ২৪ শতাংশ সঙ্কোচন থেকে এক বছর পর অর্থনীতির কাঁটা স্পর্শ করেছে ২০ শতাংশের বৃদ্ধিকে। প্রায় ১০ মাস ধরে শূন্যের নীচে থাকার পর।
গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রবলভাবে রক্ষা করেছে কৃষি এবং কৃষি সংক্রান্ত বাণিজ্য। আর গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে সচল রেখেছে একটিমাত্র প্রকল্প—১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি। ইউপিএ সরকারের প্রস্থানের সাত বছর পার। তারপরও কিন্তু ডঃ মনমোহন সিংয়ের সেই প্রকল্পই গ্রামজীবনকে জীবিকার অক্সিজেন সাপ্লাই করে চলেছে। আর এই সারসত্য বাজেট অথবা অর্থমন্ত্রীর একের পর এক প্যাকেজেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। ২০২০ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট এবং তার পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল ১০০ দিনের কাজে। চলতি বছরের বাজেটে সেই অঙ্কটা ৭৩ হাজার কোটি। কিন্তু যেভাবে বিগত মাসগুলিতে এই প্রকল্পে কাজের চাহিদা আছড়ে পড়ছে, তাতে আগের বছরের শ্রমদিবস ছাপিয়ে যাবে বলেই ধারণা। তাই এই প্রকল্পে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর। মঙ্গলবার সরকার বলেছে, কৃষি ও সহায়ক ক্ষেত্রের বৃদ্ধি প্রায় ১০৮ শতাংশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারতের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ হয়েছে সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। মোট ব্যয় যেখানে ১০ লক্ষ কোটি, সেখানে কর বাবদ আয় মাত্র ৫ লক্ষ ২১ হাজার কোটি টাকা। গত বছর জুলাই মাসে অর্থনীতির চালিকাশক্তি, অর্থাৎ কোর সেক্টরের বৃদ্ধির হার ছিল মাইনাস ৭.৬ শতাংশ। সেটাই এবার হয়েছে ৯.৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। বরং অশোধিত তেলের উৎপাদন এক ধাক্কায় কমেছে সাড়ে ৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী, কোর সেক্টর বৃদ্ধির আভাস দিলেও ক্রয়সূচকের হার কিন্তু ইতিবাচক নয়। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ ও শিল্প মহলের মধ্যে এখনও ক্রয় ও বাণিজ্যিক লেনদেনের আড়ষ্টতা রয়ে গিয়েছে। তবে সরকার জিডিপি রিপোর্ট নিয়ে উল্লসিত। জিডিপি রিপোর্ট আসার পরই সরকার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ৯০ শতাংশ অর্থনীতির বৃদ্ধি কোভিড-পূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। কোর সেক্টরে বৃদ্ধির হার ছিল শূন্যের নীচে। এখন প্রতিটি কোর সেক্টরই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।