একশো দিনের কাজে বাংলায় শীর্ষে বাঁকুড়া জেলা
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ১০০ দিনের কাজে রাজ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করল বাঁকুড়া। জেলায় ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে প্রায় চার লক্ষ পরিবারকে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দিয়েছে প্রশাসন। তাছাড়া রাজ্যের দেওয়া টার্গেট তিন মাসের মধ্যে পূরণ করে প্রথম স্থান পেল বাঁকুড়া। ১০০ দিনের কাজের এই সাফল্যের খবর শুনে খুশির হাওয়া প্রশাসনের অন্দরে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেশি সংখ্যক মানুষকে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে তাঁরা ন্যূনতম মজুরি পান। আমরা সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। গত কয়েকমাসে সেই দিকটি আমরা পূরণ করতে পেরেছি। ১০০দিনের কাজে রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাঁকুড়া।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ায় চলতি আর্থিক বর্ষে এক কোটি ২৪ লক্ষ ৯১ হাজার ৯৩০ শ্রম দিবসের টার্গেট দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেই টার্গেট পূরণের নির্দেশ দেয় রাজ্য। কিন্তু, বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন আগস্টের মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে। বর্তমানে বাঁকুড়ায় শ্রমদিবস হয়েছে এক কোটি ২৮ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৭২।
প্রশাসনের দাবি, জেলায় তিন লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৮৬টি পরিবার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্ম সুনিশ্চয়তা প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। তার মধ্যে ৪৮ শতাংশ মহিলা জেলায় এই প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন। এছাড়া ৩৪৯৪টি পরিবার ১০০দিন পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন হওয়ার পর ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকরা বাড়ি ফেরেন। বাঁকুড়ায় তাঁদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে এই ১০০ দিনের প্রকল্প। সেই সময় জেলায় ৩২ হাজার ৩২২ জন পরিযায়ী শ্রমিক কাজ পান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে অবশ্য অনেক শ্রমিক ফের ভিনরাজ্যে কাজে যান। অনেকে আবার বাড়িতেও থেকে যান। সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে নতুন জব কার্ড দেওয়া হয় ৮৫৫০টি। এবছর জেলায় মোট জবকার্ড রয়েছে ৬ লক্ষ ১৭ হাজার জনের। জেলায় এই সংখ্যক জবকার্ডধারীদের মধ্যে যাঁরা কাজের আবেদন করেছিলেন, তাঁদের এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ায় গত এপ্রিল, মে মাস নাগাদ বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা ছিল। ফলে ওই দু’মাস জেলায় ১০০ দিনের কাজ সেভাবে করা যায়নি। কিন্তু, তারপর থেকে বাঁকুড়ার গরিব মানুষকে ১০০ দিনের প্রকল্পে বেশি করে কাজের সুযোগ দিতে নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নেয় প্রশাসন। তাছাড়া বর্ষার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয় রাজ্য।
প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় পুকুর খনন, চেক ড্যাম, হাতি প্রতিরোধক পরিখা খনন, নদীবাঁধের ভাঙন রোধে ভেটিভার ঘাস রোপণ, দুধের ফলন বাড়াতে নেপিয়ার চাষ, সামাজিক বনসৃজন, মিশ্র ফলের বাগান, ঔষধি গাছের চাষ, খেলার মাঠ, দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র, ছাই ইট নির্মাণ প্রভৃতি ধরনের কাজ হয়েছে জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সেরা তালিকায় বাঁকুড়া প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়া আলিপুরদুয়ার, পশ্চিম বর্ধমান জেলাগুলি পরবর্তী স্থানে রয়েছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, নিয়মিত ব্লক, পঞ্চায়েতের সঙ্গে নজরদারি চালানো হয়েছিল। তাছাড়া প্রশাসনের কর্তারা একাধিকবার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ পরিদর্শন করেছেন। সকলের মিলিত প্রয়াসেই ১০০ দিনের কাজে আমরা রাজ্যে প্রথম হয়েছি। এবার নতুন লক্ষ্যমাত্রা রাজ্য থেকে দেওয়া হলে তা পূরণ করা হবে।