রোহিতের সেঞ্চুরিতে ছন্দে ফিরল টিম ইন্ডিয়া
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2021/09/Rohit-Sharma.jpg)
উঁচিয়ে ধরা ব্যাট। হেলমেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মৃদু হাসি। ওভালে সেঞ্চুরির পর রোহিত শর্মার শরীরী ভাষায় স্বস্তির পাশাপাশি ফুটে উঠল নীরব ঔদ্ধত্যও। ইংল্যান্ডকে পাল্টা চাপে ফেলে দেওয়া এই ইনিংস টেস্ট ওপেনার হিসেবে তাঁর কেরিয়ারের এক উজ্জ্বল মুহূর্ত। হিটম্যানের দাপটে দমবন্ধকরা চাপ থেকে মুক্তি পেল ভারতীয় শিবিরও।
ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লম্বা ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত। পরম আনন্দে হিটম্যানকে জড়িয়ে ধরলেন সঙ্গী চেতেশ্বর পূজারা। গ্যালারিতে তখন তুমুল হাততালি। ড্রেসিংরুমে উৎসবে মাতলেন সতীর্থরা। বিরাট কোহলিকে দেখা গেল বার দুয়েক আকাশে হাত ছুড়তে। ক্যামেরা ধরল বক্সে বসে থাকা স্ত্রী রীতিকাকে। মুখভরা হাসি। টিম ইন্ডিয়ায় আবার ‘ফিল গুড’ মেজাজ। ৯৯ রানের ঘাটতি মিটিয়ে বড় রানের ভিত গড়ে তুললেন রোহিতই। চলতি সিরিজে ব্যাটিং থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শট যতটা সম্ভব ছেঁটে ফেলেছেন তিনি। প্রকৃত টেস্ট ওপেনারের মতোই দিচ্ছেন ধৈর্যের পরীক্ষা। খেলছেন সোজা ব্যাটে। সিরিজে আগের ম্যাচগুলিতে দু’টি হাফ-সেঞ্চুরি করেও তিন অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেননি রোহিত। শনিবার সেই আক্ষেপ ভুলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন মুম্বইকর। শুরু করেছিলেন ধীরেসুস্থে। আশ্চর্যের হল, একসময় তাঁর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ছিল পূজারার স্ট্রাইক রেট! বোঝাই যাচ্ছিল, ইগোকে পকেটে পুরেই ব্যাট করতে নেমেছেন তিনি।
পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়ার পর গতি বাড়ালেন রোহিত। গিয়ার বদলে রকমারি শটের প্রদর্শনীতে মাতালেন ওভাল। স্লগ সুইপ থেকে স্কোয়ার কাট, কিছুই বাদ দিলেন না। তবে তা মোটেই বেপরোয়া মেজাজে নয়। সতর্কতাকে সঙ্গী করেই টানতে লাগলেন দলকে। মঈন আলিকে ছক্কা মেরে শতরান পূর্ণ করার মধ্যে অবশ্য ফুটে উঠল সাদা বলের ক্রিকেটের সেই চেনা আগ্রাসন। টেস্টে বিদেশের মাটিতে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। আর ঘরে-বাইরে মিলিয়ে অষ্টম টেস্ট শতরান।
হতে পারে, দু’বার স্লিপ কর্ডনে ক্যাচ পড়েছে রোহিতের। কিন্তু, কে না জানে, ভাগ্য সাহসীদেরই সঙ্গ দেয়। মেঘলা আবহে রোহিত শুধু নির্ভীক ভাবে অ্যান্ডারসন, ওকস, রবিনসনদেরই মোকাবিলা করেননি, স্বভাববিরুদ্ধে মেজাজে ব্যাট করেছেন দলীয় চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে। দ্বিতীয় নতুন বলে হঠকারী শটে আউট হওয়া বাদ দিলে তাঁর ১২৭ রানের ইনিংসে আগাগোড়া প্রতিফলিত হল দায়িত্ববোধের বার্তা।
সকালে বিনা উইকেটে ৪৩ নিয়ে শুরু করেছিল ভারত। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে রোহিতের ওপেনিং জুটির দিকেই আশা নিয়ে তাকিয়েছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। রাহুল খেলছিলেন ভালোই। তবে ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরির ঠিক আগে। এর পর দ্বিতীয় উইকেটে ১৫৩ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের আশায় জল ঢাললেন রোহিত-পূজারা। শুরুতে পূজারা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন। বড় রান নিশ্চিত ছিল তাঁরও। কিন্তু, রোহিত ফেরার কয়েক বল পরে মনঃসংযোগ হারিয়ে তিনিও ধরলেন ড্রেসিংরুমের পথ। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরালেন রবিনসন। কিন্তু, তারপর বিরাট কোহলি (২২ ব্যাটিং) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৯ ব্যাটিং) থাকলেন অটল। তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর ৩ উইকেটে ২৭০। লিড ১৭১ রানের।
স্কোর: ভারত প্রথম ইনিংস ১৯১।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৯০।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস (গতদিনের বিনা উইকেটে ৪৩ রানের পর)- রোহিত ক ওকস বো রবিনসন ১২৭, রাহুল ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ৪৬, পূজারা ক মঈন বো রবিনসন ৬১, কোহলি অপরাজিত ২২, জাদেজা অপরাজিত ৯, অতিরিক্ত ৫, মোট (৯২ ওভারে) ৩ উইকেটে ২৭০। উইকেট পতন: ১-৮৩, ২-২৩৬, ৩-২৩৭। বোলিং: অ্যান্ডারসন ২৩-৮-৪৯-১, রবিনসন ২১-৪-৬৭-২, ওকস ১৯-৫-৪৩-০, ওভারটন ১০-০-৩৮-০, মঈন ১৫-০-৬৩-০, রুট ৪-১-৭-০।