দেশ বিভাগে ফিরে যান

মধ্যপ্রদেশে এমবিবিএসের সিলেবাসে থাকবে আরএসএস নেতাদের জীবনী

September 6, 2021 | 2 min read

মহর্ষি চরক কিংবা সুশ্রত পর্যন্ত ঠিকই ছিল, তা বলে ‘সঙ্ঘ সেবক’ (Sangh Sevak) দের জীবনীও ঢুকে পড়ছে চিকিৎসা শাস্ত্রে! মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার দেশের হবু ডাক্তারদের জন্য এমনই সিলেবাস তৈরি করছে।

এমবিবিএসে (MBBS) প্রথম বর্ষের পাঠক্রমে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক (RSS)’-এর ধারক-বাহকদের মধ্যে কাদের জীবনী পড়ানো হবে, তার একটি রূপরেখাও তৈরি করে ফেলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিশ্বাস সরং (Vishvas Sarang)। তালিকায় রয়েছেন কেশব বলিরাম হেগড়ে থেকে শুরু করে দীনদয়াল উপাধ্যায়। চিকিৎসার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘গেরুয়াকরণ’-এর অভিযোগ এড়াতে খানিকটা ভারসাম্যের রাস্তায়ও হেঁটেছে মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) সরকার। কৌশল অবলম্বনে তালিকায় নাম রাখা হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ ও বি আর আম্বেদকারের। 

কিন্তু তাতেও কী আর বিতর্ক থেমে থাকে? বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলতে শুরু করে দিয়েছেন—মরদেহ কাটাছেঁড়ার সিলেবাসে হিন্দুত্বের ‘অ্যানাটমি’ পড়িয়ে লাভ কোথায়? কী শিখবেন আগামীর চিকিৎসকরা? আসলে, ‘মোদির দেশ’-এ সবই সম্ভব! সরংদের কাণ্ডকারখানা দেখে তাজ্জব শিক্ষক মহলের একটা বড় অংশও। তাদের বক্তব্য, ‘এমন গোদা গোদা চিন্তাভাবনা নিয়ে আর যাই হোক, চিকিৎসা শাস্ত্রকে পুষ্ট করা যায় না। এই সহজ সত্যটা কে কাকে বোঝাবে!’ যদিও শিক্ষামন্ত্রীর সাফাই—‘চিকিৎসা শাস্ত্রে নীতি-শাস্ত্র অবশ্যই পাঠ্য। সে ক্ষেত্রে হেগড়ে কিংবা দীনদয়ালদের জীবনী ভাবী ডাক্তারদের নীতি ও আদর্শবোধকে জাগ্রত করবে।’ 

এমবিবিএসের প্রথম বর্ষকে মূলত ‘ভিত্তিবর্ষ’ ধরা হয়। কারণ, এই এক বছরে পড়ুয়াদের বেশিরভাগ সময়টাই কাটে মরদহে কাটাছেঁড়া করে। অ্যানাটমি পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া প্রথম বর্ষের পাঠক্রমে মানবসেবায় নীতি-শাস্ত্রের পাঠও থাকে। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোনও রাজ্য সরকার চাইলে কি এমবিবিএসের সিলেবাস নিজেদের মতো তৈরি করতে পারে? ‘দ্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল (এনএমসি)’-এর একটি সূত্র বলছে, এমবিবিএস কোর্সে কী কী পড়ানো হবে, তা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস তৈরি করে তারা। কিন্তু ভিত্তিবর্ষের সিলেবাসে মূল বিষয়বস্তু কী থাকবে, তা ঠিক করার এক্তিয়ার রয়েছে রাজ্যগুলির। শিক্ষাদপ্তর প্রয়োজন মতো পরিবর্তন কিংবা সংযোজন করতে পারে। 

মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী সরংও বলেছেন, ‘এমবিবিএসের ভিত্তিবর্ষের পাঠক্রমে কী থাকবে, না থাকবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। সেই মতো প্রাতঃস্মরণীয়দের জীবনীকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি। মানবসেবা এবং দেশ গঠনে তাঁদের মূল্যবান চিন্তাভাবনা পড়ুয়াদের আদর্শ চিকিৎসক হতে সহযোগিতা করবে।’ তা বলে হিন্দুত্বের ‘আইকন’ বলে পরিচিত কেশব বলিরাম হেগড়ে কিংবা দীনদয়ালের জীবনীও? ১৯২৫ সালে নাগপুরে আরএসএসের প্রতিষ্ঠা করেছিলে হেগড়ে। সেই সঙ্ঘ পরিবারেই তৈরি হয়েছে আজকের বহু বিজেপি নেতা-নেত্রীর। উপাধ্যায়ও ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। ডাক্তারি পড়ুয়াদের হিন্দুত্বের সবক শেখাতে কী সিলেবাসে ঢুকল তাঁদের জীবনী? প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। তবে, সরংয়ের বক্তব্য, ‘এঁরা সকলেই দিগ্‌দর্শী মানুষ ছিলেন। এঁদের জীবনবোধের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যা ডাক্তারির শিক্ষার্থীদের প্রেরণা জোগাবে, মূল্যবোধ শেখাবে।’ 

মধ্যপ্রদেশে প্রতি বছর দু’ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এমবিবিএসে ভর্তি হন। মন্ত্রী বলেছেন, ‘সামনের শিক্ষাবর্ষ (২০২১) থেকেই পাঠক্রমে হেগড়দের জীবনী পড়ানো হবে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি একরকম সারা।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Madhya Pradesh, #MBBS

আরো দেখুন