দেশ বিদেশের প্রায় তিন লক্ষ মানুষ অনলাইনে মা তারার দর্শন করলেন কৌশিকী অমাবস্যায়
সোমবার কৌশিকী অমাবস্যায় দেশ বিদেশের প্রায় তিন লক্ষ মানুষ অনলাইনে মা তারার দর্শন ও পুজো দিলেন। শুধু পুজোই নয়, কেউ কেউ অঞ্জলিও দিয়েছেন। নাম-গোত্র ধরে সেবাইতদের মাধ্যমে অনেকে হোমে আহুতি নিবেদন করেন। করোনা আবহে তারাপীঠ মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন ও মন্দির কমিটি। এই পরিস্থিতিতে জেলার সতীপীঠ নলাটেশ্বরী, কঙ্কালীতলা, ফুল্লরা, নন্দিকেশ্বরী ও বক্রেশ্বর মন্দিরে সকাল থেকেই ভক্তদের ঢল নামে। প্রতিটি মন্দির আলোকমালায় সাজিয়ে তোলা হয়। করা হয় যজ্ঞের আয়োজনও। দীর্ঘদিন পর ভক্ত সমাগমে এলাকাগুলির ব্যবসায়ীরা খুশি। একইভাবে তারা মায়ের বোন হিসেবে পরিচিত ঝাড়খণ্ডের মুলুটিতে মা মৌলীক্ষ্যা মন্দিরেও এদিন ভালোই ভক্ত সমাগম হয়েছিল।
গত বছরও করোনার বাড়বাড়ন্তে কৌশিকী অমাবস্যার দিন মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবারও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় এই তিথিতে টানা ছ’দিন মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন ও মন্দির কমিটি। তবে এবার যাতে ভক্তরা নিরাশ না হন সেজন্য গর্ভগৃহ থেকে পুজো, আরতি সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। সেজন্য নাট মন্দিরে লাগানো হয় বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিন। সেবাইতরা সেই স্ক্রিন থেকে ভিডিও কলের ভক্তদের মাধ্যমে মা তারার দর্শন করান।
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, সকাল সাতটা বাজতেই দেশ-বিদেশের ভক্তরা নিজ নিজ সেবাইতের মোবাইলে ভিডিও কল করতে থাকেন। তাঁরা অঞ্জলির পাশাপাশি নাম-গোত্র ধরে পুজো ও যজ্ঞে আহুতি দিয়েছেন। সেবাইতদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণাও। সেখানে যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেজন্য মূল সেবাইতের সঙ্গে সহযোগী হিসাবে একজন করে ছড়িদারকে মন্দিরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রায় তিন হাজারের বেশি সেবাইত ও ছড়িদার মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রায় তিন লক্ষ ভক্ত এদিন অনলাইনে মায়ের দর্শন ও পুজো দিয়েছেন।
কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, কৌশিকী অমাবস্যার নিশি পুজোয় শৃঙ্গারের পর মাকে বিশেষ বেশে সাজানো হয়। রীতি অনুযায়ী বছরের এই দিনটিতে মায়ের রাতের ভোগে অবশ্যই থাকে শোলমাছ পোড়া, কারণবারি, খিচুরি ও পায়েস।
ছড়িদার বরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, জার্মানি থেকে এদিন ভিডিও কলে মায়ের দর্শন করেছেন কবিতা পাল। করোনা আবহে মন্দির কমিটির ব্যবস্থাপনায় আপ্লুত হয়েছেন তিনি। একইভাবে ভিডিও কলে কলকাতার গার্ডেনরিচের বাসিন্দা পার্থ মণ্ডল, নবদ্বীপের বলাই দেবনাথরা পুজো দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, কৌশিকী অমাবস্যায় মায়ের দর্শন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। গত বছর মন্দির বন্ধ থাকায় দর্শন মেলেনি। এবছর ঘরে বসেই মায়ের পুজো ও অঞ্জলি দিতে পেরে মনটা ভালো লাগছে। কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে সাধুসন্তরা ভিড় করেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ভাদুগানের আসর, বাউলের আড্ডা বসে যেত। কিন্তু এবার শ্মশানজুড়ে শুধুই নিস্তব্ধতা। অনেক সাধুসন্ত আগে থেকেই শ্মশানে চলে এসেছিলেন। কিন্তু ভিড় এড়াতে পুলিস তাঁদের সরিয়ে দেয়। একইভাবে পুজো সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলিও এদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কৌশিকী অমাবস্যা থেকে এলাকায় দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। কিন্তু এবছরও মন্দির বন্ধ থাকায় হোটেল, লজ ব্যবসায়ী, ফুল ও পুজোর সামগ্রী বিক্রেতাদের মন খারাপ। মায়ের কাছে তাঁদের আবেদন, খুব দ্রুত করোনা ভাইরাস মুক্ত হোক পৃথিবী।