গৌতমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শিলিগুড়ির বিধায়কের, জল্পনা দলবদল নিয়ে
সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেবের সঙ্গে দেখা করলেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। দলবদলের বাজারে এই খবর চাউর হতেই জেলাজুড়ে তুমুল জল্পনা ছড়ায়। তা হলে কি শঙ্করও? সদ্য বিজেপির দুই বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। রবিবারই উত্তরবঙ্গের আরএক বিজেপি বিধায়ক রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী দলের বিরুদ্ধে বেসুরো হয়েছেন। এরই মধ্যে এদিন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা গৌতমবাবুর সঙ্গে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের ‘একান্ত সাক্ষাৎকার’ নিয়ে স্বভাবতই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। তবে সেই জল্পনা অবসানে তড়িঘড়ি শঙ্করবাবু জানিয়ে দেন, শহরের উন্নয়নের স্বার্থে পুরসভার প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছি। পুরসভা সূত্রের খবর, এদিন দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভায় গিয়ে গৌতমবাবুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। মূলত, শহরের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন বলে জানান শঙ্কর। তিনি বলেন, শিলিগুড়ির বিধায়ক আমি। তাই শহরের উন্নয়ন নিয়ে পুর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম।
দলের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলেন? জবাবে বলেন, আমার বিধানসভা এলাকার উন্নয়নের জন্য কোনও কাজ করতে হলে দলের অনুমতি লাগে না। পরে গৌতমবাবুও জানান, উনি শহরের উন্নয়নের বিষয়ে কিছু কথা বলতে এসেছিলেন। যদিও পরে বিজেপির শিলিগুড়ির সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে বর্তমান পুর প্রশাসনের সমালোচনা করেন শঙ্করবাবু। আর তা করতে গিয়ে ঢালাও প্রশংসা করে ফেলেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যর। অথচ বিধানসভা ভোটের প্রচারে অশোকবাবুকে মেয়র হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ, শিলিগুড়ির জন্য কোনও কাজ করেননি, এমন সব অভিযোগ তুলেছিলেন। এমনকী তাঁকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন ‘উনি শুধু চিঠি লেখেন।’ একসময়ের ‘গুরু’কে ‘চিঠিবাবু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সোমবার তাঁর মুখেই সেই অশোক ভট্টাচার্যের কাজের প্রশংসা করা নিয়ে ফের গুঞ্জন শুরু হয়। তাহলে উনি কী করতে চাইছেন, এমন মন্তব্যও শোনা যায় রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শহরে পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হয়। মূলত, গজলডোবায় পানীয় জলের উৎস ক্যানেলে পলি জমে থাকায় জলের জোগান কমে। সেই ঘটনা প্রসঙ্গে বর্তমান পুর প্রশাসক গৌতমবাবু বিগত বাম বোর্ডের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন। এদিন সাংবাদিকদের শঙ্করবাবু বলেন, শিলিগুড়িতে পানীয় জলের সমস্যা যে দেখা দেবে, তা জানা ছিল। তাই শিলিগুড়ির মেয়র হয়েই এর সমাধানে অশোকবাবু কলকাতায় গিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তাঁকে মন্ত্রীর ঘরের বাইরে অপেক্ষা করে ফিরে আসতে হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন জল প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়ে বারবার যোগাযোগ করেও তিনি রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কাছে থেকে কোনও সাড়া পাননি। প্রায় দু’বছর আগে বেশ কয়েকদিন শহরে জল সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তার জন্য অশোকবাবু নাগরিকদের আগাম খবর দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জলের ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করেছিলেন। মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। কিন্তু এবার প্রশাসক বোর্ড এধরনের কোনও উদ্যোগই নেয়নি।
শিলিগুড়ির বিধায়ক হিসেবে অশোকবাবু নিজের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় শিলিগুড়ির উন্নয়ন করতে চাইলেও প্রশাসনিক অসহযোগিতায় তা ঠিকমতো করতে পারেননি বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন শঙ্কর ঘোষ। স্বাভাবিকভাবেই, সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার পর যাঁকে চূড়ান্ত ব্যর্থ বলে প্রচার করেছিলেন। এখন আবার তাঁর ঢালাও প্রংশসা করা নিয়ে শঙ্করবাবুর রাজনৈতিক ভূমিকায় ধন্দ শুরু হয়েছে।