ঐতিহ্য ধরে রেখেই শুরু হল আলিপুর জেলের সংস্কার
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। জেলের ঐতিহ্য বজায় রেখে এই কাজ করা হবে। এখানে একটি মিউজিয়াম গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আলিপুর গ্রিন এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে সরকারি সংস্থা হিডকো। ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, আধিকারিক, কর্মীরা যাতে জেল এলাকার মধ্যে দিন-রাত কাজ করতে পারেন, সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কারাদপ্তর।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারিনটেনডেন্টের বাংলোটি হিডকোর সাইট অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ওই সংস্থা যাতে কাজ করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে দপ্তর। প্রসঙ্গত, আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে গত কয়েক বছর ধরে কোনও বন্দি নেই। বন্দিদের বেশিরভাগকেই নতুন বারুইপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য কয়েকজন কর্মী এখন এখানে আছেন। কয়েক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় জেলখানা চত্বর ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছিল। সেই সব কেটে এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে।
তবে জেল চত্বরে থাকা সরকারি প্রেসটি এখনও চালু রয়েছে। ১৯০৬ সালে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল তৈরি হয়। তার বছর চারেক পর এখানে প্রেসটি চালু হয়। জেলের ভিতরেই একটি দোতলা বাড়িতে প্রেসটি চলে। নীচের তলায় রয়েছে ছাপার মেশিন। উপরে হয় বাইন্ডিং ও প্রেসের অফিসের কাজকর্ম। এই প্রেসে সরকার বিভিন্ন ফর্ম ও কাগজপত্র ছাপে। যে ৫৪ জন কর্মী এই প্রেসে কাজ করেন, তাঁরা কারাদপ্তরের অধীনে। একসময় জেলের বন্দিরাও প্রেসে কাজ করতেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে সব বন্দিকে সরিয়ে দেওয়ার পর পাশের প্রেসিডেন্সি জেল থেকে প্রতিদিন কয়েকজন বন্দিকে প্রেসে এনে কাজ করানো হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য কয়েক মাস ধরে এই প্রেস বন্ধ।
কারাদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আপাতত জেলের প্রেসটিকে বাদ দিয়েই সংস্কারের কাজ চলবে। দপ্তর সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে এই প্রেস আদৌ আর থাকবে কি না, সন্দেহ। প্রেসের কর্মীদের অন্যত্র কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারা বিভাগের এক শীর্ষকর্তা বলেন, বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি পুরনো। তা দিয়ে বিশেষ কিছু কাজ আর করা সম্ভব নয়। বাস্তবতা বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রেসের তৃণমূলপন্থী কর্মী সংগঠনের এক প্রতিনিধিদল সম্প্রতি কারামন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে দেখা করেন। তারপরই প্রেসের অংশ বাদ দিয়ে সংস্কারের নির্দেশিকা জারি হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারামন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কর্মীদের অন্যত্র সরানোর ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলখানাটি সংস্কারের পর সেখানে কী করা হবে, তা এখনও ঘোষণা হয়নি। সরকারি সূত্রের খবর, জেল চত্বরে আবাসন, বাণিজ্যিক প্রকল্প তৈরি করা হলেও হেরিটেজ স্থানগুলিকে রক্ষা করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, জেল হাসপাতালটিকে মিউজিয়াম হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই জেলের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সহ বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এখানে বন্দি ছিলেন। তাঁদের সেলগুলি দর্শকদের দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলের মধ্যে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো করার পরিকল্পনা রয়েছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ফাঁসির মঞ্চের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেটিকেও রক্ষা করা হবে।