রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ঘুরপথে দখল করতে চাইছে কেন্দ্র
রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘুরপথে অধিকার কায়েম করতে চাইছে কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থাগুলির দায়িত্বে থাকা ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সাপ্লাই ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার করতে হবে এই নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের প্রস্তাব সাপ্লাই সংস্থার (ডিসকম) হাত থেকে ৩৩ কেভি সাপ্লাই ব্যবস্থা নিয়ে স্টেট ট্র্যান্সমিশন ইউটিলিজ (এসটিইউ) বিভাগকে দেওয়া হোক সংস্কারের জন্য। আর সেই জন্য যে অর্থব্যয় হবে সেই টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। তবে যদি রাজ্য সরকার সেই টাকা ব্যয় করতে না পারে, তাহলে কেন্দ্রীয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের সঙ্গে এসটিইউ যৌথ উদ্যোগের সমঝোতা করুক। ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্বে এই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। সুতরাং সেক্ষেত্রে আগামীদিনে সংস্কার হওয়া ৩৩ কেভি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সাপ্লাই প্রক্রিয়ার অন্যতম চালিকাশক্তি হবে কেন্দ্রীয় পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন।
এর আগে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ আইনের সংশোধনী এনে নতুন আইন চালু করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আরও বেসরকারিকরণ এবং রাজ্যের অধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সিংহভাগ রাজ্যই সেই আইনের বিরোধিতা করেছে। আন্দোলনও করছে কর্মী ইউনিয়নগুলি। এমতাবস্থায় পুনরায় সরবরাহ ব্যবস্থায় সংস্কারের কারণ দর্শিয়ে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র, এই অভিযোগ আবার শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে আগামীদিনে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মালিকানা নিয়ে কেন্দ্র বনাম রাজ্য বিরোধের সূত্রপাত ঘটাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেন ৩৩ কেভি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিয়ে আধুনিকীকরণ চায় কেন্দ্র? কেন্দ্র রাজ্যকে দেওয়া চিঠিতে বলেছে, ৩৩ কেভি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ অপচয় ও আর্থিক লোকসান হচ্ছে। অন্তত সাড়ে ৪ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় ঘটে এই ব্যবস্থায়।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটি ২৫টি এসটিইউ এবং ৫০টি ডিসকম পরীক্ষা করে তাদের কাজের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছে, যেখানে ৬৬ কেভি থেকে ২২০ কেভি সরবরাহ ব্যবস্থায় লোকসানের পরিমাণ মাত্র ১.৭২ থেকে ২.২০ শতাংশ, সেখানে ৩৩ কেভি ব্যবস্থায় লোকসান গড়ে ৪.৮ শতাংশ। সেই রিপোর্ট পেয়েই ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছে ৩৩ কেভি সরবরাহ ব্যবস্থা স্টেট ট্র্যান্সমিশন ইউটিলিটিজের আওতায় আনা হোক।
যেহেতু দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো নয়, তাই এসটিইউর কাছে চলে যাক এই ৩৩ কেভি। সেখানে এই ব্যবস্থার সংস্কার, আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে অন্তত এক থেকে দেড় শতাংশ লোকসান কমানো যাবে বলে রিপোর্টে বলা হচ্ছে। যদিও এই সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট ও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের চিঠির প্রতিপাদ্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশন। আপত্তি তুলছে রাজ্যগুলিও। তাদের অভিযোগ, এভাবে আসলে কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকারে অধিকারে নিয়ে আসতে চাইছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যে বিদ্যুৎ সংশোধনী আইন আনা হচ্ছে, সেখানে বলা হয়েছে যে কোনও সময় সরবরাহ ব্যবস্থার লাইসেন্স বাতিল করে বেসরকারিকরণ করা যাবে। সুতরাং একবার সাপ্লাই ব্যবস্থা কেন্দ্রের অংশীদারিত্বে চলে গেলেই বেসরকারিকরণ শুরু হবে দ্রুত। রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকাই থাকবে না।