এবার রাজ্যের স্কুল পাঠ্যক্রমেও স্থান পেল ‘করোনা’
একাদশ শ্রেণির ‘স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা’ বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হল করোনা ভাইরাস এবং রোগ সংক্রমণ ও প্রতিরোধের বিষয়টি। এই শিক্ষাবর্ষ থেকে তা পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের। একাদশ শ্রেণির যে বই তৈরি হয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই তা ঢুকেছে। তাতে ম্যালেরিয়া, কলেরা, কালাজ্বর, জলাতঙ্ক, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইডস প্রভৃতি রোগের পাশাপাশি রাখা হয়েছে কোভিড ১৯-কেও।
সিলেবাস এক্সপার্ট কমিটি সূত্রে খবর, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে যষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যসুচিতেও করোনার বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। যদিও, কমিটির এক শীর্ষস্থানীয় সদস্য বলেন, সেই বিষয়টি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনও ভাবনাচিন্তার স্তরেই আছে বলা যায়। যদিও শিক্ষাদপ্তর সূত্রে খবর, এই ভাবনার বাস্তবে রূপায়ণ হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কারণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হলে সরাসরি কোনও চিকিৎসা নেই। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা চলে। অন্যান্য আনুষঙ্গিক ক্ষতি ঠেকানোর চেষ্টা হয়। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল, একে প্রতিরোধ করা। সেই প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তেমনই খুব উপযোগী ভূমিকা নেয় পরিচ্ছন্নতা বিধি পালন, মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা, যতটা সম্ভব মানুষের ছোঁয়া এড়িয়ে চলা প্রভৃতি। এগুলি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। তা হলেই রোগটিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বইয়ে উল্লেখ করা রয়েছে, ঠিক কী কী ভাবে করোনাকে এড়ানো সম্ভব। মাস্কের ব্যবহার, স্যানিটাইজারের ব্যবহারের কথা রয়েছে। প্যানডেমিক, এপিডেমিক, এনডেমিক— রোগ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপ্তির নিরিখে কোন শব্দ কখন ব্যবহার করা হয়, সে সবের উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কোভিড সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমন ব্যক্তিদের সংজ্ঞা। একদল হলেন, সম্ভাব্য। কমিউনিটি পর্যায়ে কোভিড ছড়িয়েছে, এমন দেশ থেকে ঘুরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে সর্দি, কাশি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্য দেখা দিয়েছে, এমন লোকজন এর অন্তর্ভুক্ত। ১৪ দিনের মধ্যে কোনও কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসার পরে কারও এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, এমন ব্যক্তিরাও তার আওতায় পড়বেন। আনুমানিক আক্রান্ত বলা হয়েছে, যাঁদের কোনও কারণে ল্যাবরেটরি রিপোর্ট আসেনি বা টেস্টই করা হয়নি। তবে, টেস্টে ভাইরাস মিললে, তাঁদের নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ধরা হবে কোনও উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও। কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির এক মিটারের মধ্যে ১৫ মিনিটের বেশি অবস্থান করলেই অপর ব্যক্তিকে ‘সংস্পর্শে আসা’ কেস হিসেবে গণ্য করতে হবে।
শুধুমাত্র সরাসরি সংস্পর্শ নয়, বায়ুবাহিত ড্রপলেটের মাধ্যমেও কীভাবে রোগ ছড়াতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষক মহল রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তাদের মতে, রোগটি যখন যাওয়ার নয়, তখন ছোটবেলা থেকেই সতর্ক এবং ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। কে বলতে পারে, বড়রা মাস্ক না পরে বের হলে, তারাই হয়তো মনে করিয়ে দেবে। স্কুল খুললে বিষয়টি নিয়ে আরও সজাগ থাকতে হবে তাদের।