উপাচার্য ব্যস্ত রাজনীতিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়নে এক ধাক্কায় ২৮ ধাপ নামলো বিশ্বভারতী
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)-এর বিচারে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) অবনমন হল। সামগ্রিক বিচারে ক্রমতালিকায় এবছর এক ধাক্কায় ২৮ধাপ নেমে ৯৭তম স্থান পেল বিশ্বভারতী। গতবছর ছিল ৬৯তম স্থানে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারে ১৪ধাপ নেমে বিশ্বভারতী পেয়েছে ৬৪তম স্থান। গতবছর ক্রমতালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫০তম স্থানে। যা ঘিরে প্রাক্তনী ও আশ্রমিকদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনীতিকরণের জন্যই রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের এমন হাল বলে অনেকেরই অভিমত।
বিশ্বভারতী নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদদের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হওয়ায় এই অবনমন বলে মনে করছেন বিশ্বভারতীর শিক্ষাবিদরা। গতবছর শিক্ষাবিদদের ধারণায় (পিয়ার পারসেপশন) ১০০-র মধ্যে ১০.৪২ নম্বর মিলেছিল বিশ্বভারতীর। আর এবছর মিলেছে ৬.২২। পাশাপাশি, ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট রেশিও (এফএসআর) ক্যাটাগরিতেও অবনমন হয়েছে বিশ্বভারতীর। গত বছর যেখানে ৩০ এর মধ্যে ২৪.১৩ নম্বর মিলেছিল, এবছর সেখানে মিলেছে ১৬.৫১ নম্বর। এর প্রধান কারণ, বিশ্বভারতীতে স্থায়ী উপাচার্য থাকা সত্ত্বেও নানা বিভাগে অধ্যাপকদের শূন্যপদ পূরণ না হওয়া। এই অবনমনের জন্য বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য ও প্রশাসনকে একহাত নিয়েছেন অধ্যাপক সংগঠন ভিবিইউএফএ, প্রাক্তনী ও আশ্রমিকরা।
এব্যাপারে ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর কটাক্ষ করে বলেন, বিশ্বভারতীতে এখন আর লেখাপড়া হয় না, কেবল রাজনীতি হয়। সেজন্যই এই অবনমন খুব স্বাভাবিক। এটা হওয়ারই ছিল। যতদিন না এখানে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরে আসবে ততদিন র্যাঙ্কিংয়ের অবনমন হতেই থাকবে। বর্তমানে এখানে শিক্ষা ব্যবস্থাটাই উঠে গিয়েছে। এদিকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার তিনদিন পর অবশেষে ঢোক গিলল বিশ্বভারতী। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষকে কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে ই-মেল করেন বিশ্বভারতীর প্রোক্টর শঙ্কর মজুমদার। ৭২ঘণ্টা পর নির্দেশ কার্যকর করলেও বিশ্বভারতীর এত সময় লাগা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হাইকোর্টের রায় বিশ্বভারতী কার্যকর করতেই স্বস্তিতে তিন পড়ুয়া। তবে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আগামী দিনেও আইন মেনে আন্দোলন চলবে বলে পড়ুয়ারা জানান।
শনিবার বিশ্বভারতীর প্রোক্টরের নির্দেশে ভাষা ও সংগীত ভবনের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিভাগীয় প্রধানরা ‘বহিষ্কৃত’ পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরাতে যোগাযোগ করেন। শনি ও রবিবার বিশ্বভারতীর ছুটির দিন। তাই, আগামী সোমবার তাঁদের ক্লাসে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের ‘বহিষ্কৃত’ পড়ুয়া সোমনাথ সৌ ও ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ফাল্গুনী পানকে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ফোন করে ক্লাস করার ব্যাপারে মতামত জানতে চান। আশাব্যাঞ্জক কথা হয়েছে বলে সোমনাথ ও ফাল্গুনী জানান। অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ওদের ক্লাসে ফেরানোর হাইকোর্টের নির্দেশ দেরি করে কার্যকর করা বিশ্বভারতীর আদালত অবমাননার শামিল। এব্যাপারে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।