মানবাধিকার কমিশনে কারা বিজেপির লোক? রিপোর্ট তলব সুপ্রিম কোর্টের
দেশের একের পর এক সাংবিধানিক সংস্থার শীর্ষে সক্রিয় বিজেপি নেতা এবং বিজেপি নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিদের বসানোর ফলে এবারে বড়োসড়ো বিপাকে কেন্দ্রের সরকার। বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার সরকার গঠন করার পরেই ভোট-পরবর্তী হিংসায় বহু বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে বলে বিজেপি অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে প্রতিনিধি দল তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, সেই প্রতিনিধি দলে কোন কোন বিজেপি নেতা ছিলেন তার বিস্তারিত তথ্য সহ তালিকা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিমকোর্টে কপিল সিব্বল প্রশ্ন তোলেন, এটা কি বিজেপির তদন্ত কমিটি? এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তিনি কলকাতা হাইকোর্টের তরফে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার উপরে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টে। এরপরে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি বিনীত শরণ এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু বিস্তারিতভাবে রাজ্যে ভোট পরবর্তী অশান্তির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এবং সিট নিয়ে তথ্য জানতে চান। তাঁরা জানতে চান, এই কমিটিতে কারা রয়েছেন? বিচারপতি শরণ এবং অনিরূদ্ধ বসু রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং অপর পক্ষের আইনজীবী মহেশ জেঠমালানিকে তাঁদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই তদন্ত বাতিল করার দাবিতে সুপ্রিমকোর্টে পিটিশনে রাজ্য সরকার আবেদন করেছিল, মূলত বিজেপি নেতাদের নিয়ে গঠিত ও সরাসরি বিজেপি নিয়ন্ত্রিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জমা দেওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতিত্বমূলক এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট যেভাবে সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে তা ন্যায় সঙ্গত নয়। এর পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময় কলকাতা হাইকোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে বক্তব্য রেখেছিল তা জমা দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। রায়ের ১৫১ অনুচ্ছেদে কলকাতা হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করে নিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টের কাছে জমা দিয়েছে তা নিরপেক্ষ নয়। হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট লেখা হয়েছে রাজুলবেন দেশাই, আতিফ রশিদ এবং রাজীব জৈনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এই তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা অবাঞ্ছিত। বিশেষ রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে পরিচিত এই সমস্ত ব্যক্তিদের এই নিরপেক্ষ কমিটিতে রাখার ফলে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করাই যেত।
সাংবিধানিক স্ব-শাসিত সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসীন রয়েছেন সক্রিয় বিজেপি নেতা আতিফ রশিদ। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের স্নেহধন্য বিজেপি মহিলা মোর্চার নেত্রী বর্তমানে জাতীয় মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রাজুলবেন দেশাই। এদের পাশাপাশি ছিলেন আরেক সক্রিয় বিজেপি নেতা রাজীব জৈন। এছাড়া সর্বোপরি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে নরেন্দ্র মোদির গুনগ্রাহী সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অরুণ মিশ্রকে।