নিট না দিয়েও পড়া যাবে ডাক্তারি, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত তামিল নাড়ুতে
নিট পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে ১৯ বছরের তরুণের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় সোমবার উত্তাল হল তামিলনাড়ু বিধানসভা। তামিলনাড়ু বিধানসভা এদিন তামিলনাড়ু অ্যাডমিশন টু আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল ডিগ্রি কোর্সেস বিল পাস করেছে। এর ফলে রাজ্যের শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্টের (এনইইটি) ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হতে হবে না। বরং এখন থেকে তাঁরা দ্বাদশে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভরতি হতে পারবে। তবে এই বিল কেন্দ্রীয় আইনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। একমাত্র রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেই তা লাগু করা যাবে।
উল্লেখ্য, ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় গত দু’বছরের মতো এবারও অকৃতকার্য হওয়ার আতঙ্কে রবিবার সালেমে ধনুশ নামের এক তরুণ আত্মঘাতী হন। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ হতেই নিট পরীক্ষা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ শুরু করে তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে (DMK) ও বিরোধী দল এআইএডিএমকে। বিরোধীদের দাবি, শাসকদল চাইলেই সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষা বাতিল করতে পারে। কিন্তু তা করছে না। অন্যদিকে রাজ্যে নিট পরীক্ষা বাতিল না করা নিয়ে কেন্দ্রের অনড় মনোভাবকেই দায়ী করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
মুখ্যমন্ত্রী গত ৫ জুন NEET-এর প্রভাব খতিয়ে দেখতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ কে রাজনের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে স্ট্যালিন (MK Stalin) এদিন তাঁর রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের নিট পরীক্ষা থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য একটি বিল পেশ করেন। তামিল মাধ্যমের পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে প্রস্তাবিত বিলটিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতক স্তরে মেডিসিন, ভারতীয় মেডিসিন, দন্ত বিষয়ক ও হোমিওপ্যাথি বিভাগে ভর্তি করা হবে। নিট বাতিলের দাবিতে অন্য রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সমর্থনও তাঁর সরকার আদায় করবে বলে বার্তা দিয়েছেন স্ট্যালিন। বিজেপি এদিন ওয়াক আউট করলেও রাজ্যের বাকি সমস্ত দলই বিলটি সমর্থন করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ও কেন্দ্রের নির্দেশের বিরোধিতা করে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা হিসাবে নিট বাতিল করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব হচ্ছিলেন তামিল ভূমের নেতারা। তাঁদের দাবি, ইংরেজিতে এই সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তামিল মাধ্যমে পড়াশোনা করা পড়ুয়ারা। শুধু ধনী ও অভিজাত সম্প্রদায় এর সুযোগ নিচ্ছে। অনেক মেধাবীই এই পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারছেন না। যার জেরে তাঁদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। ধনুশের মৃত্যুতে তাঁদের সেই দাবিতেই ঘৃতাহুতি দিয়েছে। ইউপিএ (UPA) জমানায় সহযোগী ডিএমকে প্রায় এক দশক মেডিক্যালে প্রবেশিকা পরীক্ষা ঠেকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বিজেপি রাজত্বে সেই সুবিধা আদায় করতে পারেনি এআইএডিএমকে। যার জেরে রাজ্য বোর্ড পরীক্ষার্থীদের নিট-এ সাফল্য প্রায় দশ ভাগ কমে যায়। তুলনায় সাফল্য বাড়ে সিবিএসই (CBSE) বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের। ডাক্তারি পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়ে এদিন বিধানসভায় স্ট্যালিন বলেন, “ইংরেজিতে নিট প্রবেশিকা পরীক্ষার কারণে গ্রাম ও শহরতলির বহু পড়ুয়া আতান্তরে পড়ে। কেন্দ্র তাদের সমস্যা বোঝে না। কেন্দ্রের গাফিলতি ও অনড় মনোভাবের জন্যই ওই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। নিটের বিরোধিতা করে আজ থেকে আইনি লড়াই শুরু করলাম। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করা রাজ্য সরকারের কর্তব্য। যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় সরকার নিট পরীক্ষা প্রত্যাহার করে আমরা লড়ে যাব। আমরা জিতবই।”
এদিন বিধানসভায় বিরোধী এআইএডিএমকের (AIADMK) বিধায়করা কালো ব্যাজ পরে এসে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী নেতা পালানিস্বামী মৃত ছাত্রের পরিবারের একজন সদস্যকে ডিএমকে সরকার চাকরি ও ক্ষতিপূরণ দিক বলে দাবি করেন। স্ট্যালিনকে বিঁধে তিনি বলেন, “নিট বাতিল করা হবে বলে রাজ্য সরকারের নেতারা মুখে শুধু বলেই আসছিলেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডিএমকে ভোটে জিতে ক্ষমতায় চলে এল। আর তাঁদের কথা বিশ্বাস করে ধনুশ নিটের প্রস্তুতি ঠিক করে নেননি। শেষে পরীক্ষার ভয়ে এভাবে অকালে ঝরে গেল।”