মালদহে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাট্টা দেওয়ার আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন
গঙ্গা সহ অন্যান্য নদীর ভাঙনে ভিটেছাড়া সমস্ত পরিবারকে পাট্টা দেবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার মালদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর সেচদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন একথা জানান। নিজেদের মতো করে জায়গার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পতিত জমির জন্য ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। মন্ত্রীর ঘোষণায় জেলার বাস্তুহারা দুর্গতদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটেছে। তাঁরা দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা চাইছেন।
এব্যাপারে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, নদী ভাঙনে বাস্তুহারা পরিবারগুলি আমাদের রাজ্যেরই বাসিন্দা। ফলে আমরা দায় এড়াতে পারি না। ইতিমধ্যে দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এদিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সকলকে পাট্টা দেওয়া হবে। তার জন্য বিডিওদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কালিয়াচক-৩ ব্লকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। পাট্টার জন্য অনেক জমির প্রয়োজন। ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে পতিত জমি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মালদহ জেলার ভৌগোলিক সীমানায় তাদের তেমন জমি নেই বলে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে। ফরাক্কায় তারা কিছু পরিবারের পুনর্বাসন দিতে পারবে বলে আধিকারিকরা আমাদের জানিয়েছেন। যারা ফরাক্কায় যেতে চাইবেন, তাঁদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। বাকিদের মালদহ জেলার মধ্যে পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। উল্লেখ্য, মালদহে জালের মতো বিভিন্ন নদনদী ও নালা ছড়িয়ে রয়েছে। তারমধ্যে গঙ্গা, ফুলহার, মহানন্দা, কালিন্দ্রী উল্লেখযোগ্য। বর্ষার মরশুমে জেলার প্রধান নদনদীগুলি ফুঁসে ওঠে। বর্তমানে গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহার কানায় কানায় বইতে শুরু করেছে। নদীর জলের তীব্র স্রোত সজোরে পাড়ে এসে ধাক্কা খাচ্ছে।
জলোচ্ছ্বাস ধাক্কা খাওয়ার পর কুণ্ডলি পাকিয়ে পাড়ে মাটি ধসিয়ে দিচ্ছে। ফলে ভাঙন সমস্যা প্রকট হয়েছে। গত কয়েক বছর জেলায় ভাঙন সেভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে জেলায় তীব্র ভাঙন হয়েছে। জেলার মধ্যে কালিয়াচক-২ ও ৩ এবং মানিকচক ব্লকের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ভাঙন সমস্যায় জর্জরিত হয়েছেন। প্রতিদিনই নদীর গ্রাসে চাষের খেত, বসতবাড়ি তালিয়ে যাচ্ছে। মানিকচকের ভূতনির চর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বন্যা দুর্গত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আধিকারিকরা মনে করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদনদীর এলাকা মূলত সেচদপ্তরের আওতায় পড়ে। সারা বছর সেচদপ্তরই নদীবাঁধে নজর রাখে। তবে জেলা প্রশাসনের তরফেও অনেক সময় বাঁধ মেরামতের কাজ করা হয়। গ্রামীণ এলাকায় ১০০ দিনের কাজেও নদীবাঁধ সংলগ্ন এলাকা সংস্কার করা হয়। তবে সামগ্রিকভাবে সেচদপ্তরের দায়িত্বই এক্ষেত্রে বেশি। সম্প্রতি জেলা থেকে রাজ্য স্তরে ভাঙন নিয়ে দফায় দফায় রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেখানে জেলার ভাঙন কবলিত ব্লক এলাকার চিত্র তুলে ধরা হয়। সেচদপ্তরের বাস্তুকাররা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরাও সরকারের উপরতলায় পরিস্থিতির বিবরণ দেন। রাজ্য সরকার এব্যাপারে সহানুভূতিশীল বলে আধিকারিকদের দাবি।
কালিয়াচক-৩ ব্লকের ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেচদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ও মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র সহ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আধিকারিকদের কথায় উঠে আসে। সমস্যা সমাধানে এদিন বৈঠক হয়। জেলা কালেক্টরেটে মন্ত্রী আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানেই ভাঙন মোকাবিলা ও পাট্টা দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ভাঙন মোকাবিলায় কংক্রিটের গার্ডওয়াল তৈরির ব্যাপারে সেচদপ্তরের বাস্তুকারদের পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্য জেলায় ওই ধরনের গার্ডওয়াল নির্মাণে কাজ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা এদিনের বৈঠকে বাস্তুকারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এব্যাপারে তাদেরই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।