এবার টেলিকম শিল্পেও বিদেশি লগ্নিতে ১০০ শতাংশ ছাড়পত্র
বিমা, বিমানবন্দর, কয়লা, খুচরো ব্যবসা ইত্যাদির পর এবার টেলিকম। এই ক্ষেত্রেও ১০০ শতাংশ ‘শর্তহীন’ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) রাস্তা বুধবার খুলে দিল মোদী সরকার। পুরোটাই হবে অটোমেটিক রুটে। শুধু জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে থাকছে একটি নিষেধাজ্ঞা। পাকিস্তান এবং চীনের কোনও কোম্পানি এই সুযোগ নিতে পারবে না। সেই সঙ্গে ভারতী-এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া এবং রিলায়েন্স কমিউনিকেশন—দেশের প্রধান তিন বেসরকারি টেলিকম সংস্থাকেও বিপুল আর্থিক প্যাকেজ দিয়েছে মোদী সরকার। তাদের কাছে যাবতীয় বকেয়া পাওনা আপাতত চার বছরের জন্য স্থগিত। পাশাপাশি মকুব হয়েছে সরকারকে প্রদেয় স্পেকট্রাম ফি বাবদ অর্থের একাংশ। বদলে ফেলা হয়েছে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ বাবদ সরকারকে প্রদেয় অর্থের সংজ্ঞা তথা ফর্মুলাও।
সব মিলিয়ে বড়সড় রেহাই পেল সংস্থাগুলি।ওই তিনটি সংস্থার কাছে লাইসেন্স ফি বাবদ সরকারের পাওনা ৯২ হাজার কোটি টাকা। আরও ৪১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য। তার মধ্যে শুধু ভোডাফোনের কাছেই কেন্দ্র পায় ৫০ হাজার কোটিরও বেশি। তাই টেলিকম সংস্থাগুলির দীর্ঘদিনের আবেদন ছিল, সরকার কোনও প্যাকেজ না দিলে এই সেক্টর আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ ডুবে যাবে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে টেলিকম ব্যবহারের খরচও বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছিল। সবথেকে বেশি লোকসানে চলছে ভোডাফোন। তারা প্রায় দেউলিয়ার দোরগোড়ায়। সেই পরিস্থিতিতে চার বছরের জন্য তাদের যাবতীয় বকেয়া স্থগিত রেখে টেলিকম ক্ষেত্রকে চরম স্বস্তির বার্তা দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।আবার একইসঙ্গে বিদেশি টেলিকম সংস্থাগুলিকে ভারতে প্রবেশের আহ্বান জানিয়ে সম্পূর্ণ দরজা খুলে দেওয়া হল। অর্থাৎ এখন থেকে এর জন্য পৃথকভাবে সরকারের ফিনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশনাল বোর্ডের (এফআইপিবি) অনুমতির আর প্রয়োজন নেই। এর আগে ইউপিএ সরকার টেলিকম ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ এফডিআই ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তা ছিল আংশিক শর্তাধীন। ৪৯ শতাংশ অটোমেটিক রুটে এবং বাকি ৫১ শতাংশ এফআইপিবি অনুমোদনসাপেক্ষ। এবার মোদী সরকার কোনও সরকারি বিধিনিষেধের আর শর্তই রাখেনি। তবে পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিবেশি দেশের কোনও টেলিকম সংস্থা ভারতের মাটিতে প্রবেশ করতে পারবে না। উল্লেখ্য, টেলিকমকে সম্পূর্ণভাবে বিদেশি লগ্নির জন্য খুলে দেওয়া নিয়ে ইউপিএ আমল থেকেই ছিল একটি আশঙ্কা—অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিপদ। সেই একই কারণে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত।
গাড়ি শিল্পের জন্যও বিশেষ প্যাকেজ এদিন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বিশেষ উৎপাদন কেন্দ্রিক উৎসাহ ভাতা প্রদান করার ক্ষেত্রে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। অর্থাৎ যে সংস্থা বেশি উৎপাদন করবে, তাদের উৎপাদন ব্যয়ের একাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, এই প্যাকেজের ফলে সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর লগ্নি আসবে ৪৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি।