করোনাকালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে ১০০ কোটি আয় রাজ্যের
করোনার দাপটে গত অর্থবর্ষের শুরু থেকে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল রাজ্যের অর্থনীতি। পরিস্থিতি বুঝে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র দেড় বছরে তার সুফল মিলছে। এই করোনাকালে ড্রাইভিং ও অন্যান্য লাইসেন্স ইস্যু করেই ১০০ কোটিও বেশি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে রাজ্য সরকারের। নবান্নের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পোর্টালে আপলোড করা তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ৩২ কোটি টাকা ঢুকেছে কোষাগারে। গত অর্থবর্ষে এই বাবদ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭১ কোটিরও বেশি টাকা।
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গত বছর থেকে গাড়ি, বাইক, স্কুটি বিক্রির হার বেড়েছে। ফলে লাইসেন্স করানোর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। চলতি অর্থবর্ষেও জারি রয়েছে সেই প্রবণতা। গাড়ি চালানো শেখার হার পর্যন্ত যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাড়ি চালানো শিখে লার্নার লাইসেন্স পাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। আর সেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, লার্নার লাইসেন্স, গাড়ি চালানো শেখানোর স্কুলের লাইসেন্স ইত্যাদি ইস্যু করেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘মানুষের উপর বাড়তি ভাড়ার বোঝা না চাপিয়ে দপ্তরের অন্যান্য আয়ের উৎস খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারই ফলস্বরূপ এই আদায়। যেখান থেকে আরও আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি।’
গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ডিলাররা অবশ্য জানাচ্ছেন, গাড়ি কেনার চাহিদা থাকলেও উৎপাদন সেভাবে হয়নি। তবে এবার যেটা লক্ষণীয়, সেটা হল—নতুন লাইসেন্স প্রাপকদের একটা বড় অংশই সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছেন। সেদিক থেকে নতুন দুই এবং তিন চাকা কেনার হার বেশি। পাশাপাশি অনেকেই ব্যবসার জন্য বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছেন। তবে বেশিরভাগ বিভাগে গত বছরের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে চলতি বছরে। অন্যদিকে, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ এবং সংশোধনও করিয়েছেন বহু মানুষ।
চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে সবথেকে বেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে বলে পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর। পাঁচ কোটিরও বেশি টাকা আয় করে এই খাতে শীর্ষে রয়েছে কসবা আরটিও। কলকাতার মোটর ভেহিকেলস বিভাগ এবং সল্টলেক অফিসের আয় চার কোটি টাকারও বেশি। সূত্রের খবর, শুধু লাইসেন্স ইস্যু করে চলতি বছরের আগস্ট মাসে সর্বাধিক আয় হয়েছে রাজ্যের।
টাকার অঙ্কে সেটা ৬ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি। তবে দেড় বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ নয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এই বাবদ পরিবহণ দপ্তরের আয় ছিল প্রায় ৭ কোটি ১২ লক্ষ। গত অর্থবর্ষে এপ্রিল ও মে মাসে লকডাউনের জন্য কার্যত কোনও লাইসেন্স ইস্যু করা যায়নি। ফলে রাজস্ব আদায় কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছিল। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত নতুন লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষায় বসেছেন আট লক্ষের বেশি মানুষ। তার মধ্যে সাত লক্ষের বেশি পাশ করেছেন। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়েছেন ৫ লক্ষ ২৪ হাজার জন। পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, লকডাউনের জন্য কয়েকমাস কাজ করা যায়নি। নয়তো আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়ত।