তাঁতশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার
সামনে পুজো। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে তাঁতশিল্পীদের ব্যবসায় মন্দা। এই পরিস্থিতিতে তাঁতিদের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁতশিল্পের উন্নয়নের জন্য বৃহস্পতিবার কালনা ধাত্রীগ্রাম তাঁতের হাটে প্রশাসনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা, কালনা মহকুমা শাসক সুরেশকুমার জগৎ সহ হ্যান্ডলুম আধিকারিক সহ অন্যান্যরা। এদিনের বৈঠকে তাঁতিদের কাছ থেকে সরাসরি শাড়ি কেনা ও মহকুমায় তাঁতশিল্প গড়ে তোলা ও কাটোয়ায় তাঁতের হাট গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব ওঠে। জেলাশাসক বিষয়গুলি দেখার আশ্বাস দেন।
বর্ধমান জেলায় কালনা মহকুমায় সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রাম, পূর্বস্থলী ও কাটোয়া মহকুমা সহ বর্ধমান জেলায় কয়েক লক্ষ মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এক দশক আগে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া তাঁতশিল্পকে চাঙ্গা করতে এই সরকার (তৃণমূল) আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানারকম প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তাঁতিদের বিনামুল্যে তাঁতের ঘর সহ তাঁত দেওয়া, তাঁতের সরঞ্জাম বিলি, তাঁতিদের ক্লাস্টারের মাধ্যমে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। হাসি ফোটে তাঁতিদের মুখে। করোনা পরিস্থিতি সেই হাসিকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। তাঁতিদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তথাপি গত বছর তন্তুজের মাধ্যমে সরকার সরাসরি তাঁতিদের থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার শাড়ি কেনে। এবারও এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে শাড়ি কেনার দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি।
বৃহস্পতিবার ধাত্রীগ্রামে হ্যান্ডলুমের অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবারও তাঁতিদের থেকে সরাসরি শাড়ি কেনা যায় তাঁর প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প ভাবনা ঘোষণায় কালনা মহকুমায় মেগা তাঁতশিল্প হাব গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব দেন। ধাত্রীগ্রাম তাঁত কাপড়ের হাটের ফাঁকা জায়গায় প্রকৃতির রঙের উৎস থেকে ভেষজ উদ্যান গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ও বন্ধ হয়ে যাওয়া সমবায় সমিতিগুলি যাতে পুনর্জীবন পেতে পারে সেই বিষয়েও জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্বপনবাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁতিদের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়লেও মুখ্যমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় সরাসরি গতবছর তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কেনা হয়েছে। এবারও যাতে কেনা যায় তার প্রস্তাব রেখেছি। মহকুমার দশহাজার তাঁতিদের একলপ্তে উন্নয়নে মেঘা তাঁতশিল্প গড়ে তোলার জন্য জেলাশাসককে প্রস্তাব দিয়েছি। কালনা সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের বন্দেবাজ এলাকায় পড়ে থাকা শিল্পতালুক হোক বা অন্য কোথাও জমিতে গড়ে উঠবে এই শিল্প। জমি কোনও সমস্যা হবে না। আমরা চাই প্রকৃত তাঁতিদের উন্নয়ন। এছাড়াও অনেক সময় দেখেছি মা-বোনদের পরনের শাড়ির রং নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এক-দু’বার ধোওয়ার পর রং নষ্ট হয়ে যায়। হাটের অবশিষ্ট জায়গায় একটি ভেষজ রঙের গাছের উদ্যান করার জন্য জেলা শাসক হর্টিকালচারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। কাটোয়ায় একটি তাঁতে হাট গড়ে তোলা হবে বলেও আলোচনা হয়েছে।
জেলাশাসক বলেন, বৈঠকে স্বপনবাবু কিছু প্রস্তাব রেখেছেন। প্রস্তাবগুলি রাজ্যস্তরে পাঠানো হবে।