শিশুদের বাড়ছে ‘ভাইরাল ফিভার’, বিনামূল্যে পিসিভি টিকা দেবে রাজ্য সরকার
জ্বর নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুদের ভর্তির ঘটনায় চিন্তিত স্বাস্থ্যদপ্তর (Health Department)। আক্রান্তদের অধিকাংশই স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি বা নিউমোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত। উপসর্গে করোনার সঙ্গে এর অনেকটাই মিল রয়েছে। এই অবস্থায় শিশুদের বাঁচাতে গোটা রাজ্যের সঙ্গে বীরভূমের দুই স্বাস্থ্যজেলাতেও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন(পিসিভি PCV) টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। এব্যাপারে ইতিমধ্যেই জেলাস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আগামী ২০সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ব্লকস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের এই প্রশিক্ষণ শেষ করতে বলা হয়েছে। এমনটাই জানান স্বাস্থ্যভবনের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বিভাগীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জয়ন্ত শুকুল।
আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে ‘ভাইরাল ফিভার’ (Viral Fever)-এর পাশাপাশি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে নিউমোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়া। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয়ে শয়ে শিশু নানা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বীরভূমের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক না হলেও জেলার হাসপাতালগুলিতে অনেক শিশু ভর্তি আছে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে আক্রান্তদের অধিকাংশই নিউমোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত। কেউ কেউ স্ক্র্যাব টাইফাসেও আক্রান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে চারটি শিশু স্ক্র্যাব টাইফাসে চিকিৎসাধীন বলে এমএসভিপি পলাশ দাস জানান।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে নিউমোনিয়ার কারণে রাজ্যে পাঁচ বছরের নীচে ১৬শতাংশ শিশুর ফি-বছর মৃত্যু হচ্ছে। নিউমোকক্কাল সংক্রমণের ফলে মেনিনজাইটিস, সেপ্টেসেমিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে। সাইনাইসাইটিস ও কানে সংক্রমণের মতো রোগের সম্ভবনা থাকে। পাঁচ বছরের নীচে শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। হতে পারে মৃত্যুও। হাঁচি, কাশির সময় ছড়ানো ড্রপলেটের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এ থেকে শিশুদের বাঁচাতে তিন দফায় পিসিভি টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। শিশুর জন্মের ষষ্ঠ সপ্তাহ বা দেড় মাসে প্রথম, ১৪সপ্তাহ বা সাড়ে তিন মাসে দ্বিতীয় ও ন’মাসে তৃতীয় ডোজ প্রতিটি হাসপাতাল ও সাবসেন্টার থেকে দেওয়া হবে। খোলাবাজারে এর একটি ডোজের দাম ৩৮০০টাকা। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন দেবে। এই টিকা থেকে শিশুরা যাতে কোনওভাবেই বঞ্চিত না হয় সেব্যাপারে প্রশাসন থেকে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বুধবার এব্যাপারে রামপুরহাট সিএমওএইচ অফিস ও মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও হু-র বীরভূম জেলার সার্ভিলেন্স মেডিক্যাল অফিসার প্রণয় দত্তর উপস্থিতিতে বৈঠক করা হয়। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলায় ৩০হাজার ৫৫০টি ও বীরভূমে প্রায় ২৮হাজার শিশু জন্মেছে। সেই সংখ্যা ধরেই ভ্যাকসিনেশনের দিকে এগচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, এই টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ২০১৭সাল থেকে দেশে এই টিকা দেওয়া শুরু হয়। এবার রাজ্যেও সেই টিকা দেওয়া হবে। বর্তমানে শিশুদের জন্য করোনার টিকার ব্যবস্থা নেই। পিসিভি দেওয়ায় শিশুদের শরীরে অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। করোনার বিরুদ্ধেও তাদের লড়াই করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, যেসব বাড়িতে বয়স্করা জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন তাঁদের থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।
এরই মধ্যে রামপুরহাট মেডিক্যালে স্ক্র্যাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে চার শিশুর ভর্তিতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এঁটুলি পোকার মতো দেখতে ট্রম্বিকিউলিড মাইটসের মতো পরজীবী পোকার কামড় থেকে মানবদেহে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিইন এর একমাত্র প্রতিষেধক। পলাশবাবু বলেন, স্ক্র্যাব টাইফাস ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ। জ্বর হলেই ডাক্তার দেখান।