অধ্যাপকদের ‘চোর’ অপবাদ, বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য
সঙ্গীত ভবন থেকে চুরি গিয়েছিল প্রশ্নপত্র। তার জেরে বাতিল করতে হয় তিনটি বিভাগের পরীক্ষা। মাসখানেক আগের এই ঘটনায় অধ্যাপকদের ‘চোর’ বলে অপমান করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেই মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। শনিবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের কিছু ভিডিও ক্লিপিং ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেই সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ স্বপনকুমার ঘোষ প্রশ্নপত্র চুরির প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। জবাবে রীতিমতো রেগে বিদ্যুৎবাবু বলতে থাকেন, ‘চোর কি বাইরে থেকে এসেছে? চোর তোমাদের মধ্যেই আছে। তোমরা সবাই চোর!’ শুধু তাই নয়, সঙ্গীত ভবনের এক অধ্যাপককে তো সরাসরি ‘ধান্দাবাজ’ বলে অপমান করেছেন উপাচার্য। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও নাম না করে বিঁধেছেন ‘বাহুবলি’ কটাক্ষে।
একের পর এক নতুন বিতর্কে জড়াচ্ছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। কখনও পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল, কখনও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে জমি দখলের নোটিস, কখনও পড়ুয়াদের বহিষ্কার, কখনও অধ্যাপককে সাসপেন্ড—একের পর এক ঘটনায় নষ্ট হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাঙ্গনের সুনাম। সেই তালিকায় যুক্ত হল নয়া অভিযোগ। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, ‘সঙ্গীত ভবন, কলাভবন বিশ্বভারতীর মুকুটে দু’টি রত্ন।এনআইআরএফের মূল্যায়নে এই দু’টি ভবন নেই। আমার ধারণা, সঙ্গীত ও কলা ভবনের নম্বর যদি যোগ করা হতো, তা হলে ওই র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতী প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকত।’ অথচ সেই উপাচার্যই অনলাইন বৈঠকে সঙ্গীত ভবনের সব অধ্যাপকদের ‘চোর’ বলায় শোরগোল পড়েছে গোটা শান্তিনিকেতনে। প্রশ্নপত্র চুরির ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। তার আগে বিদ্যুৎবাবু কোন যুক্তিতে এমন মন্তব্য করলেন, প্রশ্ন তুলেছে সব মহল।
ভিডিওয় অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে উপাচার্যকে। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চৌকিদাররা কাজ করছে না, ঘুমোচ্ছে। আমি কাজ করাতে পারছি না। তাদের কিছু বলা হলে চলে যাচ্ছে বাহুবলির কাছে। আর বাহুবলি বলছে, উপাচার্য পাগল।’ এদিন তার জবাবও দিয়েছেন অনুব্রতবাবু। তিনি বলেন, ‘পাগলকে পাগল বলাটা কি অন্যায়? ক্ষমতা থাকলে নাম করে আমাকে বাহুবলি বলুক, আমি যেমন ওঁকে সরাসরি পাগল বলি। আমি বাহুবলি নই, মানুষের পাশে কাজ করতে ভালবাসি। প্রধানমন্ত্রী এক অপদার্থ উপাচার্যকে বিশ্বভারতীতে পাঠিয়েছেন, যাঁর কোনও যোগ্যতা নেই। এই উপাচার্য আসার পর বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ, স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে।’ এদিন বিশ্বভারতীর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতিও নির্বাচন করেন অনুব্রত। সভাপতি করা হয়েছে মীনাক্ষী ভট্টাচার্যকে। অনুব্রতবাবুর কড়া হুঁশিয়ারি, ‘ছাত্রছাত্রীরাই উপাচার্যের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে।’