সুনীল মন্ডলের পর কি এবার তৃণমূলের পথে অশোক দিন্দা- অরিন্দম ভট্টাচার্যরাও, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রত্যাহারে বাড়ছে জল্পনা
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই। ভোটের আগে যাঁকে পেরেছে তাঁকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। তারপর বিতর্ক শুরু হতে ভোটের পর ৬১ জন বিজেপি নেতার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ৬১ জনের মধ্যে এখন মাত্র তিন জনের নিরাপত্তা তোলা হচ্ছে। তাতেই আবার শুরু হয়েছে দলবদলের জল্পনা।
মঙ্গলবার রাজ্যকে একটি চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, আপাতত তিনজন বিজেপি নেতার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নিতে চায় তারা। তাঁরা এখন থেকে রাজ্যের নিরাপত্তায় থাকবেন। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে ৬১ জনের মধ্যে বেছে বেছে তিনজনের নিরাপত্তাই কেন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হল? কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তেই জল্পনার পারদ চড়েছে ফের।
রাজ্যকে চিঠি দিয়ে যে তিনজনের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তাঁরা হলেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাংসদ সুনীল মণ্ডল ও প্রাক্তন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং বাংলার জনপ্রিয় ক্রিকেটার থেকে রাজনীতির অলিন্দে প্রবেশ করেই বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া অশোক দিন্দা।
নবান্নে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, এই তিনজনের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার কোনও প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রের তরফে পর্যালোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিন নেতা রাজ্যের নিরাপত্তাতেই থাকবেন।
তিন নেতাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পর স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তিনজনেই কি তবে বিজেপি থেকে পাত্তাড়ি গোটাতে চাইছেন?
বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে অমিত শাহের মঞ্চে উঠে বিজেপির পতাকা নিয়েছিলেন। এমনকী বিজেপির হয়ে প্রচারও করেছিলেন। কিন্তু ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই তিনি নিজেকে তৃণমূল নেতা বলেই পরিচয় দিচ্ছেন। এমনকী বাবুল সুপ্রিয়ের তৃণমূলে যোগদানের পরদিন সুনীল মণ্ডলকে দেখা যায় তৃণমূল অফিসে। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে তৃণমূল নেতা বলেই দাবি করেন।
২০২১-এর নির্বাচনের ঠিক আগে দিল্লিতে গিয়ে ঘটা করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শান্তিপুরের তৎকালীন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। তিনি এবার বিজেপির টিকিটে নির্বাচনও লড়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। এখন তাঁর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর স্বাভাবিক কারণেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অরিন্দম ভট্টাচার্য বিজেপির হালে পানি না পেয়ে ফের তৃণমূলে ফেরার জন্য মুখিয়ে আছেন, তাই তাঁর দিক থেকে মুখ ফেরাল বিজেপি।
এই সিদ্ধান্তের পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বিজেপি ছাড়ার লাইনে রয়েছেন অশোক দিন্দাও। সুনীল মণ্ডল না হয় নিজেকে তৃণমূলী বলে দাবি করছেন, অরিন্দম ভট্টাচার্য বিজেপিতে কলকে পাননি, ক্রিকেটার অশোক দিন্দাও কি তবে বিজেপি ছাড়ছেন? সেই আভাস পেয়েই কি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে?
মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কোন কোন বিধায়ক দল ছাড়তে পারেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল! সেই তালিকায় অশোক দিন্দা-রা আছেন কি না, তা বলবে সময়। কিন্তু অনেকে যে বেসুরো হয়েছেন বিজেপিতে, তা এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে মুকুল রায়ের পরে আরও তিন বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এখনও কারা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার লাইনে রয়েছেন, তা নিয়েই জল্পনা বেড়ে চলেছে দিনদিন।