রেলের আয়তন কমানোর পথে কেন্দ্র, ব্যাপক কর্মী সংকোচনের আশঙ্কা
রেল বিভাগের আয়তন এবার কমাতে চায় মোদী সরকার। মন্ত্রকের অধীন বহু ডিরেক্টরেট একইরকম কাজ করছে। সেগুলিকে চিহ্নিত করে একসঙ্গে জুড়ে দিন। আয়তন কমান। রেল বোর্ডের আধিকারিকের (ডিরেক্টর এবং তদূর্ধ্ব) সংখ্যা ২৫০ থেকে কমিয়ে ১০০ করুন। একেকটি রেল জোনে অন্তত ১৬ থেকে ১৭টি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে। প্রতি জোনে একটি করে ইনস্টিটিউট রাখার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। রেলমন্ত্রককে এমনই সুপারিশ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল রেলমন্ত্রকের জন্য যাবতীয় প্রস্তাব সহ রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। সেটিই পাঠানো হয়েছে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীত শর্মার কাছে। সংশ্লিষ্ট সুপারিশ প্রসঙ্গে তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা প্রতি মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। আশঙ্কা, এই সংযুক্তির ফলে রেলে ব্যাপক কর্মী সঙ্কোচন হতে চলেছে।
সুপারিশে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রেলে মোট ৫২টি ডিরেক্টরেট আছে। তার মধ্যে প্রায় অনেকগুলি একই ধরনের কাজ করছে। এগুলিকে একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। উল্লিখিত প্রস্তাবে সম্ভাব্য কয়েকটি ডিরেক্টরেটের নামও সুপারিশ করেছে কেন্দ্র। যেমন বলা হয়েছে, রেলের ট্রাফিক কমার্শিয়াল ডিরেক্টরেটের সঙ্গে ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশনকে যুক্ত করা যেতে পারে। একইভাবে হেরিটেজ ডিরেক্টরেটের সঙ্গে ট্যুরিজম অ্যান্ড কেটারিং ডিরেক্টরেট, ল্যান্ড অ্যান্ড অ্যামেনিটিস ডিরেক্টরেটের সঙ্গে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডিরেক্টরেট জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। সুপারিশে জানানো হয়েছে, রেলের অ্যাকাউন্টস ডিরেক্টরেট, অ্যাকাউন্টিং রিফর্মস ডিরেক্টরেট, ফিনান্স (বাজেট) ডিরেক্টরেট এবং ফিনান্স (এক্সপেনডিচার) ডিরেক্টরেটকে জুড়ে একটিই ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিরেক্টরেট করা হবে। পাশাপাশি হাই লেভেল কমিটি ফর রেলওয়ে রিস্ট্রাকচারিং ডিরেক্টরেট, অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস (এজিই) ডিরেক্টরেট এবং হাই পাওয়ার কমিটি ডিরেক্টরেটকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে, প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র।
উল্লিখিত রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার এও জানিয়েছে যে, রেলের ভিজিল্যান্স ডিরেক্টরেটের প্রশাসনিক কাঠামো সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের (সিভিসি) নির্দেশিকা মেনে চলে না। এটি মেনে চলার ক্ষেত্রেও রেল বোর্ডকে সুনিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আলাদা করে ২১টি রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের (আরআরবি) প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারি সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়াই ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির (এনটিএ) মাধ্যমে হয়। ফলে ২১টি আরআরবির পরিকাঠামো এনটিএর সঙ্গে এক করে দেওয়া যেতে পারে। এনটিএর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য রেলের কার্যালয়ে একটি ছোট ডিজিটাল দপ্তর খোলা যেতে পারে। রেলের আলাদা আলাদা আটটি প্রোডাকশন ইউনিটের পরিবর্তে রোলিং স্টক এবং লোকোমোটিভ উৎপাদনের জন্য একটিই সিপিএসই তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে কেন্দ্র।
পাশাপাশি সুপারিশ করা হয়েছে, রেলটেলকে আইআরসিটিসির সঙ্গে জোড়া হোক। এবং সিআরআইএস তার যাবতীয় আইটি পরিকাঠামো আইআরসিটিসির হাতে তুলে দিক। ইন্ডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (আইআরএসডিসি) এবং রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (আরএলডিএ) একটিই সংস্থা হিসেবে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে পিপিপি মডেলে রেলের হাসপাতাল এবং হেলথ ইউনিটগুলির মানোন্নয়নের বন্দোবস্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে কেন্দ্র। রেলের স্কুলগুলিকেও কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠনের (কেভিএস) আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে।