হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

রাজ্য সভাপতি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন দেবশ্রী-লকেটও, কোন অঙ্কে বাজিমাত সুকান্তর?

September 27, 2021 | 2 min read

সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা সুকান্ত মজুমদারকে দিলীপ ঘোষের পরিবর্তে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। আর তার পর থেকেই উত্তাল রাজনৈতিক মহল। রাজ্য বিজেপির পূর্ব সভাপতি দিলীপ ঘোষের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল পদ থেকে। দিলীপ যতই বলুন না কেন যে তার কথাতেই রদবদল হয়েছে, রাজনৈতিক মহল থেকে আমজনতা সবাই জানেন যে গেরুয়া শিবিরের এই রদবদলের সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া এমনটা নয়।

২ মে বাংলায় বিজেপির ফলাফল দেখেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যে দলের কাণ্ডারি দিলীপ ঘোষকে অপসারণের পরিকল্পনা করে ফেলেছিল। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে কাকে আনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতেই কেটে গেল আরও চার মাস। দিলীপ যে দলে সাফল্য এনে দিতে পারছেন না, তা বিধানসভা ভোটের ফলেই প্রমাণিত হয়েছে। তার ওপর বিভিন্ন সময়ে দিলীপের নানা কুকথায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে দলকে। তার ফলেই পদ খোয়ালেন দিলীপ।

দিলীপের জায়গায় রাজ্য বিজেপি এমন কাউকে খুঁজছিল দল যাকে ভরসা করতে পারে। তাহলে সেই তালিকায় শুভেন্দু প্রথমেই বাদ যান। কারণ এর আগেই তিনি বাংলা রাজনীতিতে মীরজাফর নামে পরিচিত হয়ে গেছেন। এছাড়াও শুভেন্দু বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের অন্দরেই। ফলে রাজ্য সভাপতি হিসেবে দল যে শুভেন্দুকে ভালো ভাবে নিত না তা খুব ভালো করে জানত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

এমন কাউকে সভাপতি করার কথা ভাবা হচ্ছিল যার বয়স শুভেন্দুর থেকে কম হবে। সেই তালিকায় ছিলেন তিন জন। লকেট চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী এবং সুকান্ত মজুমদার।

লকেট চট্টোপাধ্যায় বয়সে শুভেন্দুর থেকে ছোট। লকেটের বয়স ৪৭, শুভেন্দুর ৫০। সে দিক থেকে লকেট যোগ্য হলেও, লকেট তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন। এই দলবদলের খেলায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিশ্বাস রাখতে পারছিল না লকেটের ওপর। এছাড়াও সম্প্রতি একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে লকেট তলে তলে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তৃণমূল নেতৃত্বের সাথে। আর সেই আশঙ্কাতেই বাংলার রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব কমাতে লকেটকে উত্তরাখণ্ডের পর্যবেক্ষক করেছে গেরুয়া শিবির। এই সব কারণেই লকেট সভাপতি হওয়ার রেস থেকে বেরিয়ে যান।

এরপর তালিকায় ছিলেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। মহিলা এবং উত্তরবঙ্গের সাংসদ হওয়ায় তার সভাপতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকলেও রায়গঞ্জে গোষ্ঠীদ্বন্দ অব্যহত। সেই বিষয়টিও চোখ এড়ায়নি কেন্দ্রীয় বিজেপির। বাকি থাকলেন ৪১ বছর বয়সী সুকান্ত। সুকান্ত উত্তরবঙ্গের সাংসদ। এতদিন অবধি দক্ষিণবঙ্গ থেকেই সাধারণত রাজ্যস্তরের সর্বোচ্চ নেতারা উঠে এসেছেন। এটায় সেই ধারণার বদল করানো গেল। এছাড়াও উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করা হচ্ছে এই দাবিতে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গকে বিজেপি গুরুত্ব দিচ্ছে এই বিষয়টিও তুলে ধরা গেল।

তার চেয়েও বড় বিষয় বার বার দিলীপ ঘোষের অশালীন মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। তারা এটা বুঝে গেছে যে বাঙালির মন পেতে চাই শিক্ষিত, রুচিশীল নেতাকে। পেশায় অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল। ফলে বিজেপির সেই কালিমাও খানিকটা ধুতে পারবেন সুকান্ত বলে মনে করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। এছাড়াও সুকান্ত দীর্ঘদিনের আরএসএস নেতা। ফলে সংগঠন তাঁকে হাতের মুঠোয় রাখতে সক্ষম হবে। বাকিদের থেকে বিজেপির নজরে সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিলেন সুকান্ত।

তাই অবশেষে সব কিছু ভেবে বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদে অভিষেক হল সুকান্ত মজুমদারেরই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #Locket Chatterjee, #Debasree Chowdhary, #HTK, #Dr Sukanta Majumder

আরো দেখুন