লাল ঝান্ডা বাঁচাতে মমতার হাত ধরার পরামর্শ ঋতব্রতর
দলবিরোধী কাজের জন্য বছর চারেক আগে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (Ritabrata Banerjee) কে বহিষ্কার করেছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদী (CPIM)। যদিও সে সময় রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রতর দাবি ছিল ‘দলের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে’ গিয়ে পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের রোষে পড়েছেন তিনি। তার অনেক পর তিনি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে (TMC)। সেই ঋতব্রতর গলায় শোনা গেল বামেদের ‘বাঁচানোর’ প্রয়াসের কথা। বললেন, লাল ঝান্ডাকে বাঁচাতে চাইলে মমতার (Mamata Banerjee) হাত শক্ত করুন!
মঙ্গলবার তারকেশ্বরে দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঋতব্রত। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায় লাল ঝান্ডাকে বাঁচাতে চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “আমাদের রাজ্যে সব থেকে বড় বামপন্থীর নাম হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
তাঁর কথায়, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বহু বামপন্থী বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বামপন্থীরা উপলব্ধি করলেন বিজেপির মত ফ্যাসিস্ট একটা শক্তিকে আটকাতে গেলে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই সেটা সম্ভব। তাই বহু বামপন্থী সরাসরি তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। কারণ, এটা রাজ্য বাঁচানোর লড়াই ছিল। দেশ বাঁচানোর লড়াই ছিল। সব থেকে বড় কথা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। এর পর ঋতব্রত বলেন, “লাল ঝান্ডাকে বাঁচাতে চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন। কারণ, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় প্রয়োজন আছে। আর সেটা জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই শুধু সম্ভব।”
এদিন সিপিআই ছেড়ে কানহাইয়া কুমারের কংগ্রেসে যোগদান প্রসঙ্গে ঋতব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘এটা কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।’
এদিন আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি উত্তম কুন্ডুর উদ্দ্যোগে তারকেশ্বরে আয়োজন করা হয় বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলার এক ঝাঁক নেতা নেত্রী। শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি, আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি উত্তম কুন্ডুর উদ্যোগে তারকেশ্বরে আয়োজন করা হয় বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান। এখানেই এদিন বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, দলবিরোধী কাজের জন্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, অনিল বসুর মতো দাপুটে নেতাকে বহিষ্কার করেছে আলিমুদ্দিন। কয়েক ঘণ্টার আলোচনায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, জগমতী সাঙ্গওয়ানদের মতো নেতাদের বহিষ্কার করেছিল একে গোপালন ভবন। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের স্নেহধন্য ঋতব্রতকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সময় নিয়েছিল সিপিএম। কারণ, তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনও সাংসদের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অনুমোদন করতে গেলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত লাগে। তার পর অবশ্য বহিষ্কার করা হয় ঋতব্রতকে। এর পর তিনি সংসদে নির্দলীয় ‘স্বাধীন’ সাংসদ ছিলেন। যদিও সে সময় তাঁর হাবভাব দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সংসদে তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে যোগও দেন ঋতব্রত। তার পরে বারবার বামেদের ‘ভুল’ নিয়ে সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এদিন ফের চাঁচাছোলা আক্রমণ শানালেন পুরনো দলকে।