বাংলায় স্বাস্থ্যসাথীর সুবাদে এখনও পর্যন্ত ২২ লক্ষ রাজ্যবাসী বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন
স্বাস্থ্যসাথীর সুবাদে এখনও পর্যন্ত ২২ লক্ষ রাজ্যবাসী বিনামূল্যে চিকিৎসা পেলেন রাজ্য ও বাইরের প্রাইভেট ও সরকারি হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পখাতে এখনও পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি নিয়ে মানুষের আকাশচুম্বী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গত রাখতে রোজ সাত কোটির টাকার মেডিক্যাল ক্লেম মেটাচ্ছে রাজ্য। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ‘দুয়ারে সরকার’ এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা দুই বাড়িয়েছে। ‘দুয়ারে সরকার’-এর আগে যেখানে এই প্রকল্পের জন্য দৈনিক ক্লেম হতো দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা, এখন তা আড়াই গুণ বেড়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, যেভাবে গরিব-নিম্নবিত্ত মানুষ থেকে শুরু করে সম্পন্ন পরিবারও এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পখাতে সরকারি খরচ রেকর্ড ছাড়াতে পারে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক প্রথম সারির কর্তা কলকাতানিবাসী তাঁর মায়ের চিকিৎসা করিয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডেই। এমন উদাহরণ আসছে ভুরিভুরি।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ৭০০-৮০০ হাসপাতাল থেকে যাত্রা শুরু এই প্রকল্পের। ২০২১-এর শেষলগ্নে ২৩০০ হাসপাতালের নেটওয়ার্কের বিমা প্রকল্পে রূপান্তরিত হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী। এর মধ্যে প্রাইভেট হাসপাতালই রয়েছে ১৫০০’র বেশি। শুরুর দিকে দৈনিক ক্লেম হত কমবেশি ৩০ লাখ টাকা। এখন তা-ই বেড়ে বেড়ে হয়েছে সাত কোটি। এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের উপভোক্তাদের হয়রানি বন্ধ করা। কারণ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখালেই কিছু বড়-মাঝারি কর্পোরেট হাসপাতাল নানা দোহাই পেড়ে রোগী ফেরানো থেকে অপারেশন পিছিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
দপ্তরের ওই কর্তা বললেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে মানেই রোগীর পাঁচ লাখ টাকা নানা অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরীক্ষা করিয়ে শুষে নেব—এই মানসিকতাও পাল্টিয়ে ছাড়ব আমরা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন চিকিৎসা ও অপারেশনের আদর্শ ধাপ ও পদ্ধতিগুলি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই তাঁদের রিপোর্ট জমা পড়বে। স্বাস্থ্যসাথীতে কীভাবে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হওয়া উচিত, আশা করছি সেই গাইডলাইন এ বছরের মধ্যেই আমরা স্থির করতে পারব।
প্রকল্পের আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল, এই বিপুল অর্থব্যয় দেখে একশ্রেণির শীর্ষ আমলার কুন্ঠিত ও রক্ষণাত্মক হওয়া আটকানো। প্রকল্পের এক শীর্ষস্তরের আধিকারিক বলেন, প্রকল্পখাতে খরচ বৃদ্ধি প্রকল্পের সাফল্যই বুঝিয়ে দেয়। আর এখন রাজ্যের প্রত্যেকটি মানুষের স্বাস্থ্যসাথীতে অধিকার। সেই সারসত্যটা স্বাস্থ্যভবন ও নবান্নে শীর্ষ আধিকারিকদের একাংশের বুঝতে হবে। তাই একবার যে প্রকল্প শুরু হয়েছে, ‘সুপারহিট’ হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটাই এখন প্রধান কাজ। হয়রানি শূন্যে নামিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।