আজকেও সারাদিন দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি বৃদ্ধি করে মঙ্গলবার সকালেই পশ্চিমবঙ্গ উপকূল সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে পরিণত হল। এর প্রভাবে আজ বুধবারও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। মঙ্গলবারের জন্য পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলায় ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়। আজ বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় লাল সতর্কতা থাকছে। আজ কমলা সতর্কতা থাকছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই বর্ধমান জেলার কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কবার্তা রয়েছে আজ। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বেলা গড়াতেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টি শুরু হয়। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস জানিয়েছেন, এবারে কলকাতায় অন্তত এক দফায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। নিম্নচাপটি সুন্দরবন উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশের পর দুই মেদিনীপুর, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল হয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে যাবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। এর গতিপথের এলাকায় যে-সব জায়গা পড়বে সেখানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেশি হবে। সেই ভিত্তিতে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় সবথেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবথেকে বড় প্রশ্ন নিম্নচাপটি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কতটা বৃষ্টি দেবে। এমনিতেই সেপ্টেম্বরে কিছুদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া একাধিক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের জেরে দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলা বিশেষ করে উপকূল সংলগ্ন ও তার কাছাকাছি এলাকা প্রচুর বৃষ্টি পেয়েছে। বিভিন্ন নদী ও বাঁধের জলাধারগুলিতে জলস্তর বেড়েছে। ফের প্রচুর বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। অতীতে ১৯৫৬, ১৯৫৭, ১৯৭৮, ১৯৯৫, ২০০০ সালে সেপ্টেম্বরের শেষে নিম্নচাপের জেরে প্রবল বৃষ্টিতে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছে রাজ্যে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপটির তীব্রতার মাত্রা ও এটি কতটা তাড়াতাড়ি স্থলভূমির উপর দিয়ে অগ্রসর হবে তার উপর বৃষ্টির মাত্রা অনেকটা নির্ভর করছে। আবহাওয়া অধিকর্তা গণেশবাবু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি তখনও বঙ্গোপসাগরের উপর আছে। উপকূলের কাছাকাছি থাকলেও তখনও স্থলভূমিতে ঢোকেনি। সমুদ্রের উপর যত সময় নিম্নচাপটি থাকবে তত বেশি জলীয় বাষ্প আকর্ষণ করে শক্তি বৃদ্ধি করবে। সাধারণ নিম্নচাপ থেকে শক্তি বাড়িয়ে এটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হয়েছে। আরও শক্তি বৃদ্ধি করলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তারপর আরও শক্তি বৃদ্ধি হলে অতি গভীর নিম্নচাপ হবে। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, বড় জোর গভীর নিম্নচাপ হিসেবে এটি উপকূল অতিক্রম করবে। স্থলভূমিতে ঢোকার পর সাধারণত নিম্নচাপ শক্তি হারাতে থাকে। তবে স্থলভূমিতে প্রবেশের পর শক্তি বৃদ্ধি হওয়ার ব্যতিক্রমী ঘটনাও ঘটে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
নিম্নচাপটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশের পর পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া এলাকার উপর দিয়ে অগ্রসর হবে। কলকাতার খুব কাছাকাছি এলাকা দিয়ে নিম্নচাপটি অগ্রসর না-হলেও মহানগরীতে এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। এই কারণে মঙ্গল ও বুধবার কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলির কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপটির গতিপথ ঝাড়খণ্ডের দিকে হওয়ায় সেখানে ভারী বৃষ্টি হলে দক্ষিণবঙ্গের বিপদ আছে। কারণ সেক্ষেত্রে ডিভিসির বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।