রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আজ কৃষ্ণা নবমী! কুসুম্বায় শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর পূর্বপুরুষদের চালু করা পুজো

September 29, 2021 | 2 min read

পুজো আসতে আরও কয়েকটা দিন দেরি থাকলেও রীতি মেনে আজ, বুধবার কৃষ্ণা নবমী থেকেই রামপুরহাটের কুসুম্বা গ্রামে শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত নবপত্রিকার দুর্গাপুজো। আজ ভোর ৪টে ৩৮ মিনিটে সুসজ্জিত শোভাযাত্রা সহকারে নবপত্রিকার দোলা স্নানের মধ্যে দিয়ে পুজো শুরু হবে। চলবে দশমীর দিন পর্যন্ত। প্রাচীন রীতি মেনে পুজো চালিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রীর মামা অনিল মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য শরিকরা। অন্যদিকে, জৌলুস কমে এলেও লাগোয়া ভগ্নপ্রায় মন্দিরে নশীপুরের রাজা ভূপেন্দ্রনারায়ণ সিংয়ের প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজো আজও হয়ে আসছে। প্রাচীন এই দুই পুজো গ্রামবাসীদের কাছে শুধু আবেগের নয়, ঐতিহ্যও বহন করে চলেছে।


জানা গিয়েছে, একটা সময় মাটির মন্দিরে নবপত্রিকার পুজো করতেন মুখোপাধ্যায় পরিবার। কবে থেকে এই পুজো শুরু হয়েছে, তা জানা না গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর মামার দাবি, কমপক্ষে পাঁচশো বছরের পুরনো এই পুজো। মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের একজন রাজাদের ভাড়াটে সৈন্য ছিলেন। তন্ত্র সাধনাও করতেন। তিনিই মাটির মন্দির নির্মাণ করে পঞ্চমুণ্ডির আসনে কৃষ্ণা নবমী থেকে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। দাদু সুর্দশন রায়কে এলাকার মানুষ ফুলবাবু বলে ডাকতেন। তখন থেকে এই পুজো ‘বাবুদের পুজো’ নামে খ্যাত। অনিলবাবু বলেন, ভাগনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আগে পুজোর সময় মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন। পরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মব্যস্ততার কারণে আসতে না পারলেও প্রতিবছর পুজো পাঠায়। মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী পম্পা মুখোপাধ্যায় বলেন, এই মন্দিরে খ্যাপাকালী, লক্ষ্মী-নারায়ণ ও মনসা পুজোও হয়। তবে দুর্গাপুজোয় ধুমধাম বেশি। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, চতুর্থীতে মায়ের ভোগে লাল ডাঁটার চাটনি ও নবমীতে আমচূড় দিয়ে মাছের টক ও ১১ রকম ভাজা অবশ্যই লাগে। বোধনের দিন চাল কুমড়ো, সন্ধিপুজোয় এক রঙের পাঁঠা বলিদান হয়। নবমীর বলিদানে লাগে কালো পাঁঠা। দশমীর দিন গ্রামেরই বড় বান্না পুকুরে নবপত্রিকা বিসর্জন দেওয়া হয়। 


অন্যদিকে, এই মন্দির লাগোয়া রয়েছে নশীপুরের রাজা ভূপেন্দ্রনারায়ণ সিংয়ের প্রতিষ্ঠিত ভগ্নপ্রায় দুর্গামায়ের মন্দির। খড়ের ছাউনি। যত্রতত্র আগাছা। সেই দুর্গামন্দিরে আজও রীতি মেনে বংশ পরম্পরায় পুজো চালিয়ে আসছেন মুখোপাধ্যায় পরিবার। যদিও এই পরিবারের সদস্যরা কেউ আর গ্রামে থাকেন না। তবে পুজোর সময় বর্তমান বংশধরেরা আসেন। 

কথিত আছে, এ অঞ্চলে আগে কোনও দুর্গাপুজোর চল ছিল না। নশীপুরের রাজা ভূপেন্দ্রনারায়ণ সিং কুসুম্বা গ্রামে মন্দির বানিয়ে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। কালের নিয়মে রাজতন্ত্রের অবসানের পর গ্রামেরই প্রথম গ্রাজুয়েট আইনজীবী শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়কে পুজোর দায়িত্বভার তুলে দেন। যিনি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলেন। পুজো চালিয়ে যেতে কিছু জমিও দেওয়া হয় তাঁকে। সেই থেকে নিষ্ঠা সহকারে পুজো চালিয়ে আসছে মুখোপাধ্যায় পরিবার। জনশ্রুতি, একসময় সন্ধ্যা গড়ালেই রাজবাড়ির উঠানে প্রজাদের অভাব-অভিযোগ শোনার ও খাজনা আদায়ের জন্য সভা বসত। রাজার বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও বিশাল জায়গার এক কোনায় এখনও সেই পুরানো মন্দির রয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসী সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, একটা সময় মুখোপাধ্যায় পরিবার এই পুজো বন্ধ করে দিতে চাইছিল। কিন্তু রাজাদের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন পুজো বন্ধে আমরা বাধা দিই। তবে বর্তমানে সেই জাঁকজমক আর নেই। আগে প্রচুর মানুষকে পাত পেড়ে ভোগ খাওয়ানো হতো। এখন মূর্তি গড়ে নমনম করে পুজো হয়।


বংশ পরম্পরায় এই পুজো চালিয়ে আসছেন গ্রামেরই সুশীল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আগে বলিদান প্রথা ছিল। এখন সেটাও উঠে গিয়েছে। পরিবারের সদস্য প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, মায়ের নামে সম্পত্তি সবই বেহাত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আমাদেরই পুজোর খরচ বহন করতে হয়। এই অবস্থায় পুজো চালিয়ে যাওয়া দুষ্কর। তবুও চালিয়ে যাচ্ছি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Pujo, #Krishna Nabami, #kusumba, #forefathers

আরো দেখুন