এবার প্রতিরক্ষাতেও বেসরকারি লগ্নি! অর্ডন্যান্স বোর্ডই তুলে দিল মোদী সরকার
সামরিক অস্ত্র, যন্ত্রাংশ, উপকরণ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের আওতায় থাকা তাবৎ কর্মী, সম্পদ, কারখানা এবং দপ্তর এবার থেকে সাতটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হবে। এই সাতটি সংস্থার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে কর্মী ও দপ্তরের কাজ। এই সাত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা। ১ অক্টোবর থেকেই গোটা প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে। মোদী সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল, আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প অনুযায়ী অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের সংস্কার ঘটিয়ে গড়ে তোলা হবে কর্পোরেট ধাঁচের পরিচালন ব্যবস্থা। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে বেসরকারিকরণের প্রতিধ্বনিই শুনতে পাচ্ছেন শ্রমিক কর্মচারীরা।
দেশের তাবৎ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্মী ও দপ্তরগুলিকে যে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে সেগুলি হল, মিউনিশন ইন্ডিয়া লিমিটেড, আর্মারড ভেহিকেলস নিগম লিমিটেড, অ্যাডভান্সড ওয়েপনস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ইন্ডিয়া লিমিটেড, ট্রুপ কমফোর্টস লিমিটেড, যন্ত্র ইন্ডিয়া লিমিটেড, ইন্ডিয়া অপটেল লিমিটেড এবং গ্লাইডারস ইন্ডিয়া লিমিটেড। এদিকে, ঘটনাচক্রে ঠিক যেদিন অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের অস্তিত্বের বিলোপসাধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেদিনই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি সেক্টরকে আহ্বান করেছেন আগামীদিনে তারা যেন আরও বেশি করে আসেন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। এর আগেই মোদী সরকার বেসরকারি সংস্থাকে সামরিক বিভাগের উপকরণ, যন্ত্রাংশ এবং অস্ত্র নির্মাণের বরাত দেওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে।
মঙ্গলবারই রাজনাথ সিং বলেছেন, সামরিক উপকরণ সংক্রান্ত গবেষণা এবং উন্নয়নের কাজে বেসরকারি সংস্থাগুলি লগ্নি করুক। তারা আরও বেশি করে এগিয়ে আসুক। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের দরজা বেশি করে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড তুলে দিয়ে যেভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে তাবৎ প্রোডাকশন ইউনিট এবং নন প্রোডাকশন ইউনিটকে, সেটা কি বেসরকারিকরণের পদধ্বনি? দেশের ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে সেনা ও আধা সেনার কাছে সরবরাহ করা হয় অস্ত্র, যন্ত্রাংশ ও সামরিক উপকরণ।
জানা গিয়েছে, আগামী পয়লা অক্টোবর থেকেই এই সামগ্রিক ব্যবস্থা চালু হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ৪১টি ইউনিটের কর্মীরা এখন আর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কর্মী নয়, সরাসরি কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মী। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে নতুন রুল তৈরি করতে হবে এই নতুন কর্মীদের গ্রহণ করার জন্য। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যে পদে যে কর্মী আছেন এবং যে বেতন কাঠামোর অন্তর্গত তাঁরা, সেটা একই থাকবে। কোনও হেরফের হবে না।
এদিকে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির বামপন্থী সম্মিলিত কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কর্পোরেটাইজেশনের নামে বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ নিয়ে আমরা আগেই প্রতিবাদ করেছি। মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলাও চলছে। সরকারকে আদালত হলফনামা জমা দিতে বলেছে। মামলা হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টেও। তার মধ্যেই সরকার আচমকা এরকম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অগণতান্ত্রিক মনোভাবকেই প্রতিষ্ঠা করল। পয়লা অক্টোবর কর্মচারী ফেডারেশন কালো দিন পালন করবে বলে স্থির করেছে।