ভিলেন বৃষ্টি, মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ হবে তো? চিন্তায় পুজো উদ্যোক্তারা
করোনার বাড়বাড়ন্তের ঠেলায় এমনিতেই চলতি বছরে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি অন্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা দেরিতে শুরু হয়েছিল। শেষবেলায় যা-ও বা কাজে কিছুটা গতি এসেছিল, তাতে বাদ সাধল টানা বৃষ্টি। ফলে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া তো পরের কথা, কোনও মতে মণ্ডপ তৈরি করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা যাবে কি না, এখন সেই সংশয়ে ভুগছে শহরের একাধিক পুজো কমিটি।
পাঁজিতে মাসটা আশ্বিন হলেও কার্যত ভরা বর্ষার বৃষ্টি দেখছে শহর কলকাতা। গত সপ্তাহের অতিবৃষ্টির পরে মাঝে কয়েক দিনের বিরতি ছিল। ফের মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। যা দেখে প্রমাদ গুনছেন পুজো উদ্যোক্তারা। মাত্র ১০ দিন আগে যেখানে মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে বৃষ্টির চোটে তা প্রায় বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর ফলে সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তো বাড়ছেই, সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী খরচও। বৃষ্টি থেমে কবে শরতের রোদ উঠবে, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তা।
হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘বৃষ্টি তো আর কারও হাতে নেই। করোনার পাশাপাশি বৃষ্টির বিরুদ্ধেও এ বছর আমাদের লড়তে হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে সব কিছু পিছিয়ে গিয়েছে। সময়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েই চিন্তায় আছি।’’ দমদম পার্ক ভারতচক্রের এ বছরের থিম কৃষক আন্দোলন। কিন্তু বৃষ্টির গেরোয় সেই থিমের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রতীক চৌধুরী বলেন, ‘‘জলই তো নামল দু’দিন আগে। গোটা প্যান্ডেল ছিল জলের তলায়। ভেবেছিলাম বেশি লোক লাগিয়ে তড়িঘড়ি কাজ শেষ করব, কিন্তু আবার বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলেছে। বৃষ্টি না কমলে কবে কাজ শেষ করে উঠতে পারব জানি না।’’
বিপদের আশঙ্কায় আপাতত বাইরের যাবতীয় কাজ বন্ধ রেখেছে গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। ওই পুজো কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মান্টা মিশ্র বলেন, ‘‘বাইরের বাঁশ তো ভিজে। উঁচুতে উঠে কাজ করতে গিয়ে কোনও বিপদ হলে কে সামলাবে? তাই বাইরের কাজ আপাতত বন্ধ। মণ্ডপের কাজ তো বাদই দিন, বৃষ্টির জন্য প্রতিমা আগেভাগে এনেও ঢেকে রেখে দিয়েছি। প্রতিমায় রঙের কাজটুকুও করা যাচ্ছে না। এ বছর কোভিডের কারণে মণ্ডপ একটু এগিয়ে আনায় জল জমেনি। সেটাই যা রক্ষে।’’
তবে জল-কাদায় বেহাল অবস্থা দেশপ্রিয় পার্কের। ফলে ওই পুজোর সব কাজই আপাতত বন্ধ। পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘গোটা মাঠই তো জলের তলায়, মণ্ডপ তৈরির কাজ এগোবে কী করে? এই মুহূর্তে যা অবস্থা, তাতে পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর মধ্যে সব শেষ হলে বাঁচি।’’ বেহালা ২৯ পল্লির পুজো মণ্ডপের বাইরে এ বছর নানা রঙের কারুকাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জেরে তা করা যাচ্ছে না। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকমল ঘোষ বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম মহালয়ার পরপর মণ্ডপের কাজ শেষ করব। কিন্তু টানা ১০-১২ দিন বৃষ্টি চলছে। কাজ করতে সবাই আসছেন, কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় বাইরের কাজ কিছুই এগোচ্ছে না। এই দেরির জন্য খরচও বাড়ছে।’’