ফের উত্তরবঙ্গে শিশুমৃত্য, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত ৬
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একজনই শুধু অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা এআরআইয়ে মারা গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটি জলপাইগুড়ি জেলা থেকে এসেছিল। বয়স ১ মাস ১৩ দিন। বাকি পাঁচটি শিশুর কো-মর্বিটিডি থাকায় অন্যান্য রোগে মারা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক। মঙ্গলবারই চার শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ফলে চলতি মাসে এদিন পর্যন্ত মোট ১৮ জন শিশুর মৃত্যু হল মেডিক্যালে। এর মধ্যে এআরআই অর্থাৎ জ্বর, শ্বাসকষ্টে মারা গিয়েছে আটজন।
এভাবে একের পর এক শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাপে পড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে রেফারের সংখ্যাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হল। হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, এদিন বিকেল পর্যন্ত এখানে মোট ১৩৯ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে ৬৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪২ জন শিশু। ১৩ জনের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। ১০ জনই অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে জলপাইগুড়ি ও মালবাজারের তিনজন করে ছ’জন এবং কোচবিহার, বীরপাড়া, বিধাননগর ও নকশালবাড়ি থেকে একজন করে শিশু এসেছে।
পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান ও পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ মধুমিতা নন্দী বলেন, যেকোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। আমরাও চাই না কেউ মারা যাক। কিন্তু, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এমন অবস্থায় কিছু শিশু পাচ্ছি আমরা, যাদের বাঁচানোটাই কঠিন। এর পাশাপাশি কম ওজনের অপরিণত শিশুও রয়েছে। ৭৫০ গ্রামের কম ওজনের শিশুদেরও বাঁচানো কঠিন। সারা বছরই এ ধরনের শিশু এখানে ভর্তি হয়। বেশিরভাগই মারা যায়। আর প্রতিবছরই এ সময়ে এ ধরনের জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে বিপুল সংখ্যায় শিশু আক্রান্ত হয়। অনেকে মারাও যায়। সেই তুলনায় এবার এখানে মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক নয়। বরং চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি হওয়ায় সুস্থ হওয়ার হার অনেক বেড়েছে।
হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি নেই। মৃতদের অধিকাংশই রেফার হয়ে এসেছিল। এদের প্রত্যেকেরই শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। রোগীর চাপ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোচবিহারে মেডিক্যাল কলেজ থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে অসুস্থ শিশুকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেফার করা হচ্ছে। রেফারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বাড়ছে। সেক্ষেত্রে যাতে বেডের কোনও সমস্যা না হয়, তারজন্য এদিন নতুন করে কিছু বেড বাড়ানো হয়েছে। শিশু বিভাগে যে কোভিড ওয়ার্ডটি ছিল, এদিন সেটি সাধারণ শিশু বিভাগ করা হয়েছে। আর কোভিড ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য ১৬টি বেড নিয়ে আলাদা একটি ওয়ার্ড রাখা হয়েছে। এখন করোনা সংক্রামিত কোনও শিশু না থাকায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানান ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক। বেডের সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন পরিষেবাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুপার বলেন, অক্সিজেনের কোনও সমস্যা নেই। এদিন শিশু বিভাগে নতুন করে ৩৯টি বেডে সরাসরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে মোট ৭৮টি বেডে এই পরিষেবা দেওয়া যাবে। অক্সিজেনের কোনও ঘাটতি নেই। এখন শিশু বিভাগে মোট ১৫৬ টি বেড রয়েছে। এর মধ্যে পিকু ও নিকুতে ন’টি করে মোট ১৮ টি এবং এসএনসিইউতে ৩১টি বেড রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য শিশুকে নিয়ে এসেছেন মা।