চলতি মরশুমে শহরে ৯৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি
পিছু ছাড়ছে না বৃষ্টি। গত তিন মাসে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ ক’দিন দেখা গিয়েছে, হয়তো হাতে গুনে বলা যাবে। রাশি রাশি মেঘের আনাগোনা পুরো মরশুম জুড়ে। এর মধ্যেই হানা দিয়েছে ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ। সব মিলিয়ে ভরপুর বৃষ্টি। মহানগরীতে সাম্প্রতিক অতীতে এত বৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তাদের হিসেব, বর্ষাকালে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় মহানগরীতে, এবার তার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর— চার মাসেই স্বাভাবিকের থেকে ৯৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে শহরে। অন্যান্যবার বর্ষাকালে গড়ে ৩১২.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় কলকাতায়। এবার এখনও অবধি হয়েছে ৬১৩.৮ মিলিমিটার। অক্টোবর এখনও বাকি। মোটামুটি অক্টোবরের ১০/১২ তারিখ পর্যন্ত বর্ষা থাকে পূর্ব ভারতে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
পুজোর সময়েও কি বৃষ্টি হবে? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠে এসেছে। কারণ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষা বিদায় নিতে দেরি আছে। অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই বর্ষার বিদায় পর্ব শুরু হয়ে যায়। এটা শুরু হয় উত্তর-পশ্চিম ভারত দিয়ে। গোটা দেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা বিদায় নেয় অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এবার এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। অথচ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নিতে নিতে ৬ অক্টোবর হয়ে যাবে। ফলে পূর্ব ভারত তথা এরাজ্য থেকে বর্ষার বিদায় পর্ব বিলম্বিত হবে। সেক্ষেত্রে পুজোর সময় আকাশের মুখ ভার থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা।
এবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের থেকে ৮০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গে এর পরিমাণ তুলনায় কম। আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব, উত্তরবঙ্গ ও সিকিম মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্রে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ তৈরি এবং মৌসুমি অক্ষরেখার সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে বর্ষাকালে কতটা বৃষ্টি হবে। এবার জুলাই মাস থেকে বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। যে কারণে দক্ষিণবঙ্গ সহ পূর্ব ও মধ্য ভারতে বাড়তি বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতাও মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টির সাক্ষী থেকেছে এই সময়কালে। যে কারণে বারে বারে জলমগ্ন হয়েছে এই শহর ও শহরতলি। লাগোয়া জেলাগুলিও এই সমস্যা থেকে রেহাই পায়নি। এদিকে, জোয়ারে গঙ্গার জল ফুলে ওঠায় শহরের জমা জল বের করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সংশ্লিষ্ট পুরসভা। ফলে কিছু কিছু জায়গায় দীর্ঘদিন জলবন্দি থাকতে হয়েছে মানুষকে।
আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর— এই চার মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় স্বাভাবিকের থেকে ১৯৫ শতাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরে ১২৩ শতাংশ এবং বাঁকুড়ায় ১২১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই হিসেব অবশ্য ওলটপালট করে দিয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের অঝোর বৃষ্টি। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানের বড় অংশকে এদিন ভাসিয়ে দিয়েছে নিম্নচাপের বৃষ্টি।