রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রেকর্ড ভোট দিয়ে ঘরের মেয়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাকা করল ভবানীপুর

October 1, 2021 | 2 min read

সামশেরগঞ্জ আর জঙ্গিপুরের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে স্পষ্ট ফারাক ছিল ভবানীপুরের! বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্রের মানুষ ভোট দিলেন এলাকার বিধায়ক বাছতে। শান্তিতেই মিটেছে সেই পর্ব। আর ভবানীপুরের কাঁধে ছিল তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ‘ঘরের মেয়ে’র মেয়াদ পাকা করার ভার। গণতন্ত্রের উৎসবে পাক্কা অভিভাবকের মতো সেই দায়িত্ব সামলেছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। আবেগ, উন্মাদনা নিয়ে অল্পবয়সিরাও কম যাননি। ভোট পড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল ৫৩.৩২ শতাংশ। সকাল থেকে ইভিএমে বোতাম টিপে, আঙুলে কালি লাগিয়ে  ভবানীপুর জানিয়েছে—‘ঘরের মেয়ের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাকা করলাম।’ উন্মাদনায় ঠাসা ভোট চিত্রনাট্যের অন্যতম তারকা ৮৬ বছরের জ্যোৎস্না কর্মকার। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা। দুপুরে হুইলচেয়ারে চেপে চলে এসেছিলেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের বুথে। কী বুঝছেন? সপ্রতিভ বৃদ্ধার জবাব—‘বোতাম টিপেছি এক নম্বরে, মমতার নামে। এবার তো মুখ্যমন্ত্রীকে ভোট দিলাম।’ আবেগের কোলাজে আর এক নাম রূপা মণ্ডল। গত মে মাসেও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত। তিনি এবার বলছেন ‘জয় মমতা’, ‘জয় বাংলা’। কিন্তু কেন? কৈলাস বিদ্যামন্দিরের বুথে ভোট দিতে আসা রূপা বললেন, ‘আমি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলাম। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে বেরিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় হাত ভেঙেছিল। যাদের জন্য ঘাম ঝরিয়েছি, সেই বিজেপির কেউ খোঁজ নেইনি। বরং তৃণমূলের ছেলেরাই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। এবার তাই দিদিকেই ভোট।’ বুথফেরত ভোটারদের ভাব দেখে একজন বলেই ফেললেন, ‘নন্দীগ্রামের বদলা নিয়ে যেন তৃপ্ত হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈনের এই মিনি ভারতবর্ষ।’গত বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুরের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে ২১ হাজারের বেশি লিড দিয়েছিল ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড। এবারও সেখানকার ডাঃ সুধীর বোস রোডের বুথে ইভিএমে বোতাম টেপার জন্য লাইন ছিল দীর্ঘ। প্রতীক্ষায় ছিলেন দীর্ঘদেহী এক প্রবীণ, ফিরদৌস হাসান। কিসকো দেনা হ্যায়? জবাব যেন ঠোঁটেই লেগেছিল—‘দিদি কো জিতানা হ্যায়। অউর কোই হ্যায় উনকি জ্যায়সি!’

চমকের শুরুটা অবশ্য করেছিলেন ভবানীপুরে মমতার ভোটের প্রধান সেনাপতি ফিরহাদ হাকিম ববি। ‘ঘরের মেয়ে’ যে বুথে সর্বাধিক লিড পাবেন, পুরস্কৃত হবেন সেখানকার ইনচার্জ। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল বার্তা। দিন শেষে তাই জানা গেল, ২০১১ সালের উপনির্বাচনের ভোটের হারকে ছাপিয়ে রেকর্ড গড়ে ফেলেছে ভবানীপুর। আবেগ-উন্মাদনার ভোটে চরম বিরোধীরাও যে মমতার জয় নিয়ে নিশ্চিত, তা এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথা থেকে স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘ভবানীপুর থেকে মমতা আগেও জিতেছেন, এবারও জিতবেন।’অন্যদিকে, জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে ‘আব কি বার’ আশার আলো দেখছে না বিজেপি। বরং সামশেরগঞ্জে জামানত রক্ষা নিয়ে চিন্তায় গেরুয়া পার্টি। তৃণমূলেরও দাবি, এখানে লড়াই হয়েছে দুই কংগ্রেসে। বিজেপি সেখানে ব্রাত্য। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সামশেরগঞ্জে ভোট পড়েছে ৭৮.৬০ শতাংশ। আর জঙ্গিপুরে ৭৬.১২ শতাংশ। কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় পর্বে সেই তত্ত্বে সায় দিয়েছেন গেরুয়া পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী। বরং দিনভর তিন বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে যে সব অভিযোগ করেছিল বিজেপি, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তার কোনও সারবত্তা নেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Bhabanipur, #By Election

আরো দেখুন