রেকর্ড ব্যবধানে জিতবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিশ্চিত তৃণমূল
আশঙ্কা অমূলকই হল। বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির ঘটনা বাদ দিলে বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হল ভবানীপুর-সহ তিন বিধানসভা আসনের ভোট। আসর গরম করতে বিজেপির পক্ষ থেকে ভবানীপুরের ভোট ঘিরে নির্বাচন কমিশনের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযোগের কোনও সারবত্তা খুঁজে পাননি অভিযোগের আধিকারিকরা।
বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী– সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ভবানীপুরে। এ দিনের ভোটে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ভবানীপুরে ভোট পড়েছে ৫৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের। ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর জঙ্গিপুরে ভোট পড়েছে ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এ দিনের ভোটের পরে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। রাজ্যের শাসকদলের অন্যতম শীর্ষনেতা তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি– ‘২০১১ সালের উপনির্বাচনের চেয়েও বেশি ভোটে জিতবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য সামশেরগঞ্জের ন’টি বুথে পুনরায় ভোটের দাবি জানানো হয়েছে।
এ দিন রাজ্যের যে তিন আসনে উপনির্বাচন ও সাধারণ নির্বাচন হয়েছে– তার মধ্যে ভবানীপুরের দিকে নজর ছিল গোটা রাজ্যবাসীর এবং রাজনৈতিক মহলের। কেননা– এই আসনের উপনির্বাচনে নিজের ভাগ্যপরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ মাস আগে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম আসন থেকে হেরে যাওয়ায় বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করতে গেলে ভবানীপুর থেকে তাঁকে জিততেই হবে।
সকালে ভোট পর্ব শুরু হতেই নির্বাচন কমিশনের কাছে নানা অছিলায় নালিশ ঠুকতে শুরু করেন ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী এবং বিজেপি নেতারা। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম– সুব্রত মুখোপাধ্যায়– মদন মিত্রদের নামে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলে তাঁদের নজরবন্দি করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিজেপি প্রার্থীর সেই আবদারে কর্ণপাতই করেননি কমিশনের আধিকারিকরা। খালসা গার্লস স্কুল সহ বেশ কিছু বুথে উত্তেজনাও ছড়িয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের তৎপরতায় বড় ধরনের অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। নির্বিঘ্নে ভোট করার জন্য কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ভবানীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। ফলে না শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস– না বিরোধী বিজেপিকোনও দলের কর্মী-সমর্থকরা ঠ্যাঁ-ফোঁ করতে পারেননি। সকালের দিকে ভবানীপুরে ঢিমেতালে ভোট পড়লেও বেলা গড়াতে ভোটদানের হারও বেড়ে যায়।
সকাল থেকে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল চরকি খেয়ে গোটা ভবানীপুরের এক বুথ থেকে অন্য বুথে ছুটে বেরিয়েছেন। কিন্তু ভোটের ফলাফলের আভাস বুঝতে পারার পরেই হতাশ হয়ে ক্ষান্ত দেন। এমনকী নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ তুলে সরব হন। বিজেপি প্রার্থী যখন বুথে-বুথে চরকি খেয়ে বেরিয়েছেন– তখন দিনভর নিজেকে বাড়িতেই বন্দি করে রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পড়ন্ত দুপুরে ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। বেলা ৩টে ১২ মিনিট নাগাদ মিত্র ইন্সটিটিউশনে এসে নিজের ভোট দেন তিনি। বুথে উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে নমস্কার করেন। তারপরই ঢুকে পড়েন ভোট দিতে। ভোটদান সেরে গাড়িতে উঠে পড়েন। বিকেল ৪টে ২৩ মিনিট নাগাদ বাবার সঙ্গে ভোট দিতে মিত্র ইন্সটিটিউশন পৌঁছন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন সকালের দিকে ভোটদানের শ্লথগতি দেখে কিছুটা হলেও তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। কিন্তু বেলা গড়াতেই ভিন চিত্র। ফিরহাদ হাকিম থেকে মদন মিত্র, ভবানীপুরে তৃণমূলের ভোট সেনাপতিদের মুখে লক্ষ্য করা গেল এক গাল হাসি। তবে শেষপর্যন্ত ভোটের ভাগ্যদেবী কার প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন– তা জানতে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।