মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজ: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন অধ্যক্ষ
মুকুল রায়ের(Mukul Roy) বিধায়ক বা বিধানসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (PAC)-র চেয়ারম্যান পদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষমতা শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকবে কি না তার ফয়সালা হতে চলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। এই প্রসঙ্গে বিরোধী বিজেপি শিবিরের তরফে রুজু করা মামলায় সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৭ তারিখের মধ্যে অধ্যক্ষকে মুকুলের বিধায়ক পদ নিয়ে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানানোর নিদান দিয়েছে। বিমানবাবু এবং সরকার পক্ষের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, এই নির্দেশের মাধ্যমে অধ্যক্ষ তথা পরিষদীয় এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মূলত এই যুক্তিকে সামনে রেখেই ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই (সোম বা মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করা হচ্ছে অধ্যক্ষের তরফে। এবিষয়ে নবান্নের শীর্ষস্তর থেকেও সবুজ সঙ্কেত মিলেছে। তাই মুকুল ইস্যুতে শাসক বনাম বিরোধী সংঘাত আরও উচ্চগ্রামে উঠতে চলেছে।
হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে বিধানসভার তরফে গত কয়েকদিন ধরেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া নির্দেশের কপি খতিয়ে দেখার পর তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন আইনজীবী-অধ্যক্ষ বিমানবাবু। তবে বিষয়টি নিয়ে তাঁর তরফে রাজ্যের নবনিযুক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করেন বিধানসভার সিনিয়র আধিকারিকরা। সুপ্রিম কোর্টে সৌমেন্দ্রনাথবাবুর পাশাপাশি অভিষেক মনু সিংভির মতো দুঁদে আইনজীবীকে এব্যাপারে ময়দানে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করা হয়। এদিন যোগাযোগ করা হলে এজি বলেন, শীর্ষ আদালতে এই মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। ঠিক কোন পয়েন্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করা হবে তা চূড়ান্ত করার কাজ বাকি থাকায় সোমবারের আগে স্পষ্ট কিছু বলা যাবে না।
গত বিধানসভার ভোটে বিজেপি’র টিকিটে জয়ী হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে মুকুল তাঁর পুরনো দল তৃণমূলে যোগ দেন মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদের নথি এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ সহ তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন লাগু করে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের জন্য অধ্যক্ষের কাছে আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়ার আগে অধ্যক্ষ পিএসি পদে মুকুলবাবুকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বিধানসভার নিয়ম ও প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এই মর্মে হাইকোর্টে মামলা করেন বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়। সেই মামলায় তাঁর তরফে আদালতের কাছে মনিপুরের এক বিধায়কের দলবদলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশের প্রসঙ্গ তোলা হয়। সর্বোচ্চ আদালত সেই রায়ে বলেছিল, আবেদন জমা পড়ার পর তিন মাসের মধ্যে অধ্যক্ষকে বিধায়ক পদ খারিজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুকুল ইস্যুতে তিন মাস সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় হাইকোর্ট সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে অধ্যক্ষকে ৭ তারিখের মধ্যে তাঁর সিদ্ধান্ত জানানোর নিদান দিয়েছে।