দশক পার করে ফের ভবানীপুরে তৃণমূলের আট-এ-আট
দীর্ঘদিন ১০ বছর পর ভবানীপুর বিধানসভার অধীন কলকাতা পুরসভার আটটি ওয়ার্ডেই জিতল তৃণমূল। আর নিজের এমন জয়ে তৃপ্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে জয়ের পরেই প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। ২০০৯ সালে ডিলিমিটেশনের পর প্রথমবার দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় ভোট হয়। সেবার প্রার্থী মমতা সব ওয়ার্ড থেকে ভালো ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। আবার ২০১০ সালের পুরভোটে ওই সবকটি ওয়ার্ডেই জয় পায় তৃণমূল। ২০১১ সালে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সীও ৪৯ হাজার ভোটে জয়ী হয়ে, সব ওয়ার্ড থেকে ভালো ব্যবধান পেয়েছিল তৃণমূল।
ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে মমতার উপনির্বাচনে খুব কম ভোট পড়লেও সব ওয়ার্ডে ব্যবধান পেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে প্রথম ধাক্কা খায় তৃণমূল। সেই নির্বাচনে ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ ও ৭৪ ওয়ার্ডে ভালো ব্যবধান পেয়ে ভবানীপুর বিধানসভা থেকে ১৭৬ ভোটের এগিয়েছিলেন বিজেপি-র প্রার্থী তথাগত রায়। ২০১৫ সালের পুরসভা ভোটে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী অসীম বসু। কিন্তু মাত্র কয়েকমাস পরেই তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। কাউন্সিলর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেও, ওই ওয়ার্ডের ফলাফল তৃণমূলের পক্ষে আসেনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু তৃতীয় হলেও, ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৮০০ ভোটে এগিয়েছিলেন তিনি। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ভবানীপুর বিধানসভায় ৭৭ ও ৮২ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে সবকটি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী নিজের ওয়ার্ডেও বিজেপি এগিয় গিয়েছিল ৪৯৬ ভোটে। কিন্তু এপ্রিল মাসের বিধানসভা নির্বাচনে ছয়টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে ২০৯২ ও ৫৩৭ ভোটে পিছিয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাই এ বারের উপনির্বাচনেও ৭০ ও ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই উপনির্বাচনে সবকটি ওয়ার্ডেই ভালো ব্যবধান পেয়ে জয়ী হয়েছেন। সার্বিকভাবে ২৬,৩২০ ভোট পেলেও বিজেপি প্রার্থী কোনও ওয়ার্ড থেকেই এগোতে পারেননি। আর এখানেই নিজেদের জয় দেখছে তৃণমূল শিবির। শাসকদল সূত্রে খবর, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪০০, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ১৭০০, ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৯০০, ৭২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫০০, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৮২৮, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫০০, ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ হাজার এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬০০ ভোটে প্রায় এগিয়ে থেকে নিজের জয় সুনিশ্চিত করেছেন মমতা।
ঘটনাচক্রে, এ বার প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে জয়ী হতে মুখ্যমন্ত্রী দলের সব শীর্ষ নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সব ওয়ার্ডে জয় নিশ্চিত করতেই এমন কৌশল নিয়েছিলেন মমতা। আর তাঁর কৌশল যে কাজে লেগেছে ফলাফলই তার প্রমাণ। ভোটে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি কার্ত্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব ওয়ার্ড থেকে জয় পেয়েছি, এতে আমাদের কোনও কৃতিত্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর আমরা সেই নেতৃত্ব মেনে চলেই এই সাফল্য এসেছে।’’