কেন নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া? বাস মালিকদের শোকজ পরিবহন দপ্তরের
বাড়তি বাস ভাড়া (Fare Hike) নেওয়ার অভিযোগে একাধিক বাস মালিককে (Bus Owners) শোকজ করা হল। কারণ দর্শানোর নোটিস ধরাল পরিবহণ ভবন। একই সঙ্গে বাড়তি বাস ভাড়া নেওয়া নিয়ে বাস মালিকদের সতর্কও করেছে পরিবহণ ভবন। আগামিদিনে নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি নিলে পারমিট বাতিল হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সমস্ত রুটে বাড়তি বাস ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। এমন বহু জায়গাতেই অভিযোগ উঠেছে, বাস ভাড়া সাত টাকা কিংবা আট টাকা, কিন্তু জোর করে যাত্রীদের থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছেন কনডাক্টর। এমনও অভিযোগ উঠেছে, যাত্রী তা দিতে অস্বীকার করায় রীতিমত অভব্য ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে।
এ নিয়ে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। এ নিয়ে বার বার রাজ্য পরিবহণ দফতরে অভিযোগও জমা পড়েছে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে পদক্ষেপ করার কথাও রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, এবার ময়দানে নেমে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করল পরিবহণ ভবন। যাঁরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন, সেই রুটের বাসগুলিকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হচ্ছে বাস মালিকদের। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করা হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু সেই কথায় যদি কাজ না হয়, পরবর্তী কালে পারমিট বাতিলের পথেও হাঁটতে পারে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
অন্যদিকে বাস মালিক সংগঠনের যাঁরা কর্তা রয়েছেন, তাঁরা পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে জানিয়েছেন, যতদিন না পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাসের ভাড়া ন্যূনতম হারে বৃদ্ধি না করা হবে, বর্ধিত পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কোনও ভাবেই বাস চালানো সম্ভব নয়। সে কারণেই বিভিন্ন জায়গায় বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের শোকজ বা পারমিট বাতিলের হুঁশিয়ারি নিয়ে বাস মালিক সংগঠনের কর্তাদের বক্তব্য, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার একটা নির্দিষ্ট পথ ঠিক করুক। না হলে পুজো মিটলেই ফের রাস্তায় বেসরকারি বাস কমে যেতে পারে।
বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকার বার বারই বলেছে, কোনও ভাবেই অতিমারির আবহে সাধারণ মানুষের উপর আর অর্থনৈতিক বোঝা চাপানো যাবে না। পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আগেই জানিয়েছিলেন, “অতিমারি চলছে। মানুষের হাতে এমনিই টাকা পয়সা নেই। এই অবস্থায় কোনও ভাবেই ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়। বাস মালিকদের সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। আমরা জানি পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাস মালিকরা সমস্যায় পড়েছেন। আমরা তাঁদের সমস্যার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু বর্তমান সময়ের কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের উপরে বাড়তি আর্থিক চাপ দেওয়া যাবে না।”
অন্যদিকে প্রথম থেকেই বাস মালিকদের দাবি, রাজ্য সরকারের উচিৎ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা। একইসঙ্গে তাঁরা কিছু প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। যেখানে প্রথমেই উঠে এসেছিল, বিকল্প হিসাবে সমস্ত জেলা থেকে বাস মালিকদের ২ লক্ষ টাকা করে ঋণ দিতে হবে। রাজ্যের ২৩টি জেলায় ২৩টি সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। যে বাস মালিকরা ২০২০ সাল থেকে এখনও অবধি বিমার টাকা দিতে পারেননি বলে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তাঁদের সমবায়ের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা করে অল্প সুদে দেওয়া হোক। একইসঙ্গে সরকার ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করুক।