ব্যর্থ ডিভিসি জল ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গ ভাসিয়েছে, মোদীকে চিঠি ক্ষুব্ধ মমতার
‘ডিভিসি নিজের কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ওদের জন্য বছর বছর বন্যার কবলে পড়ছে বাংলা। ওদের জন্যই বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন। তাঁদের দিনরাত কাটছে ত্রাণশিবিরে। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর—মাত্র তিনদিনে ১০ লাখ কিউসেক জল ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের একের পর এক জেলা ভাসিয়েছে ওরা। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রককে বলুন, রাজ্য, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ডিভিসি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র বের করতে। পাশাপাশি এই বিপুল বিপর্যয়ের জন্য আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক ডিভিসি।’ বন্যা বিপর্যয়ের জন্য রাজ্যবাসীর চরম দুর্ভোগ দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাষাতেই চিঠি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
মঙ্গলবার পাঠানো ওই চিঠিতে মমতা প্রধানমন্ত্রীকে গত ৪ আগস্ট পাঠানো চিঠির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। লিখেছেন, ‘তখনই আমি আপনাকে বলেছিলাম, ঠিক কী কী কারণে দক্ষিণবঙ্গে শোচনীয় ‘ম্যানমেড’ বন্যা হচ্ছে। ২৪ সেপ্টেম্বর আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে, যা ক্রমেই শক্তিশালী হবে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর এজন্য দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমনকী কমলা সতর্কতাও দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।’
‘২৪-২৮ সেপ্টেম্বর—হাতে এই চারদিন থাকা সত্ত্বেও, সেইসময় যৎসামান্য জল ছাড়ে ডিভিসি। অথচ যখন তুমুল বৃষ্টিবাদলা শুরু হল, ঠিক তখন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ওরা লাখ লাখ কিউসেক জল ছাড়তে শুরু করল। মাত্র তিনদিনে ১০ লাখ কিউসেক জল ছাড়ল। দামোদর ও অজয়ের জল অনেক বেড়ে গেল। নিম্ন দামোদর এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করল। লাখো মানুষ ঠিক পুজোরআগে চরম বিপদে পড়ল’—ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা পত্রে। সেখানে যুক্তি দিয়ে মমতা দেখান, যেখানে দামোদরের জল ধারণ ক্ষমতা ৯৫ হাজার কিউসেক, সেখানে সেই নদীতেই অল্প ক’টা দিনের মধ্যে ২.৪০ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। ফলে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার কিউসেক অতিরিক্ত জলের চাপে নদী তীরবর্তী একের পর এক এলাকার বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন লক্ষ লক্ষ মানুষ। ডিভিসি এই কাজকে একেবারে ‘অপরিকল্পিত’ ও ‘অনিয়ন্ত্রিত’ বলে নিন্দা করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলায় ডিভিসির পাঞ্চেত ও মাইথনের জল ছাড়ায় যেমন দামোদর ভাসে, ওই একই সময় ঝাড়খণ্ড সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন শিকাটিয়া বাঁধ থেকে জল ছাড়া শুরু হয়। ভেসে যায় অজয়।’ ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর কোন বাঁধ কতটা জল ছেড়েছে, তার হিসাবও এদিন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন মমতা।