ক্রমাগত হারের পর পুজোয় এবছর নিস্তেজ বঙ্গবিজেপি? চলছে জল্পনা
উনিশ-কুড়ির উৎসাহ নেই একেবারেই। বরং একুশের পুজোর আগে পদ্ম অনেকটাই নিস্তেজ। ২০১৯ সাল থেকে বাংলায় বিজেপি-র যে ‘উত্থান’, তার সঙ্গে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোও জুড়ে গিয়েছিল। বাঙালি ভাবাবেগ ছুঁতে বিজেপি উমাকে নিয়ে রাজনৈতিক উৎসবে মেতেছিল। সেটা আরও বড় মাত্রা পায় ২০২০ সালে। কারণ, তখন সামনে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট।
কিন্তু সেই ভোটে দল কাঙ্খিত ফল না করতে পারায় গেরুয়া শিবির এ বার অকালবোধনের (শরৎকালে দুর্গাপুজো আসলে ‘অকালবোধন’) আগে শূন্যতায় ভরা। ভিড় নেই রাজ্য দপ্তরে। একই অবস্থা প্রায় তিন বছর ধরে দলের ‘ওয়ার রুম’ হেস্টিংসের দপ্তরও। ভিড় নেই কর্মী-সমর্থকদের। আনাগোনা কম নেতাদেরও।
দল যে মুষড়ে পড়েছে,তা অবশ্য মানতে নারাজ নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘আসলে রাজ্যের একটা বড় অংশে বন্যা পরিস্থিতি রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা সেবাকাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাতেই মনে হচ্ছে পদ্ম এবার নিস্তেজ। পুজো মিটলেই আমাদের আন্দোলনের তেজ দেখতে পাবেন।’’
ক্ষমতা দখলের অনেক দূরে থেমে যাওয়া বিজেপি ভোটের পর বলেছিল, ৩ থেকে ৭৭ হওয়া কম কথা নয়। এখন অবশ্য তৃণমূল বলতেই পারে, ফল ঘোষণার পর পাঁচ মাসে পাঁচ জন বিধায়কের দল ছেড়ে দেওয়াটাও কম কথা নয়। কৃষ্ণনগর উত্তরের মুকুল রায় থেকে শুরু করে বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। এমন প্রবণতা জারি থাকবে বলেই শঙ্কা বিজেপি শিবিরে। দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও।
শুধু জনপ্রতিনিধিরাই নন। ভোটের আগে বিজেপি-তে এসে টিকিট পাওয়া বা না-পাওয়া অনেকেই ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালী গুহদের মতো যাঁরা ফিরতে পারেননি, তাঁরাও বিজেপি-র থেকে দূরত্ব রেখে চলছেন। বৃহস্পতিবারই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত।
বিজেপি, পুজো এবং সব্যসাচীর মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সব্যসাচী বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তিনি যোগ দেন পুজোর আগে। ততদিনে ১৮ আসনে জয়ী বিজেপি। সেই ফলের নিরিখে ১২১ বিধানসভা আসনে এগিয়ে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে সল্টলেকে দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে ছিলেন সব্যসাচী। ২০২০ সালের পুজোর আগে সব্যসাচীই প্রথম দলের তরফে একটি দুর্গাপুজো করারপ্রস্তাব দেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজি হয়ে যান। জাঁকজমকের সঙ্গে বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) পুজো হয় বিজেপি-র সাংস্কৃতিক শাখার নামে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেই পুজোর সূচনা করেন। মঞ্চে ঢাক বাজাতে দেখা যায় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের।
এবার পুজো নিয়ে কোনও তোড়জোড় নেই বিজেপি-তে। তাঁর দলবদল নিয়ে জল্পনার মধ্যেই সব্যসাচী বলেছিলেন, ‘‘ভোট ছিল তাই পুজো ছিল। ভোট নেই তাই পুজোও নেই।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পর রাজ্য বিজেপি পুজোর উদ্যোগ নেয়। গতবছরের মতো এ বারেও একই জায়গায় পুজোর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
বিজেপি শিবিরের একাংশ মনে করছে, বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির রেশ কাটতে না কাটতেই একের পরএক বিধায়কের দলত্যাগ ধাক্কা দিয়েছে দলকে। কে যাবেন আরকে থাকবেন, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যে একটা সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটাও মানছেন তাঁরা। তাঁদের একজনের বক্তব্য, ‘‘২০১৯ এবং ২০২০ সালে বিজেপি-কে ঘিরে একটা সম্ভাবনার আবহ তৈরি হয়েছিল। সেটা এখন নেই। বরং রাজ্যের পাশাপাশি দেশেও নানা ভাবে দল চাপে। তারই ছাপ পড়েছে সংগঠনে। বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হলেও তা নিচের স্তরে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।’’
তবে সুকান্ত বললেন অন্য কথা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা চলে যাচ্ছেন, তাঁদের উপরে বিজেপি নির্ভর করে না। নেতা নয়, বিজেপি কর্মীনির্ভর দল। তাই আমরা কোনও চাপে নেই। আর বাংলায় গত দু’বছরে বিজেপি যে জায়গায় পৌঁছেছে সেটাকেও খাটো করে দেখা যাবে না।’’