বাংলায় ক্রমশই ফিকে গেরুয়া শিবির, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কার্যত ঠুঁটো
রাজ্যে ভোট বিপর্যয়ের পর দলের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহ ঠেকাতে শৃঙ্খলারক্ষায় কমিটি গড়েছিল বিজেপি। তাও ভাঙন আটকানো যায়নি। এমনকী, সদ্য তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও দল ব্যর্থ। হারের ব্যবধান কমার বদলে বেড়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশই ফিকে হয়ে পড়ছে গেরুয়া শিবির। দলীয় শৃঙ্খলাও রীতিমতো আলগা হয়ে পড়েছে। খাতায়-কলমে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি থাকলেও কার্যত তা ঠুঁটো। সম্প্রতি এক বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেখানে একাধিক জেলা ও রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কার্যকলাপের প্রসঙ্গ উঠেছে। অমিতাভবাবু বলেন, এই ‘বিদ্রোহী’দের বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নিতে হবে না। অর্থাৎ শো-কজ বা সাসপেন্ড করার দরকার নেই। নতুন করে কমিটি তৈরির সময় এই অংশকে বাদ দিতে হবে। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপি’র অন্দরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ভোটের পর সার্বিক অনুশাসন নিশ্চিত করতে এই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তৈরি করেছিলেন। শুরুতে এই কমিটি যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। একাধিক নেতা-কর্মীকে শো-কজ ও সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই কমিটি। কিন্তু গত ২০ সেপ্টেম্বরের পর সেই কমিটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ, ওইদিনই বদল হয়েছে রাজ্য সভাপতি। দায়িত্ব পেয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর প্রশ্ন, ব্যবস্থা নিতে কেন ভয় পাচ্ছে দল? এভাবে কতজনকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে? শেষমেশ নয়া কমিটি করার লোক পাওয়া যাবে তো? এদিকে, উপনির্বাচনে খারাপ ফল হওয়ায় বিজেপি’র একাধিক নেতা প্রকাশ্যে নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে মাথায় রেখে তিনজনকে নিয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি তৈরি করেছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও সুভাষবাবু এই দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু এখন? এ বিষয়ে রবিবার সুভাষবাবুর প্রতিক্রিয়া, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি উঠে গিয়েছে, এমন খবর আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে তিনি দলীয় স্তরে খোঁজ নেবেন বলে জানান।
দলের অপর একটি অংশের ব্যাখ্যা, বিজেপি একটি সাংগঠনিক দল। সুনির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। সেই সূত্রে, রাজ্য সভাপতি পরিবর্তন হলে তাঁর অধীনে থাকা সব কমিটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে। নয়া সভাপতি নতুন করে সব কমিটি তৈরি করেন। ফলে এটা খুব স্বাভাবিক যে, সুকান্ত মজুমদার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন করে এই কমিটি তৈরি করা হবে। সূত্রের দাবি, আগামী ৩০ অক্টোবর রাজ্যে চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। সেই ভোট মিটলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য কমিটি সহ এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলি গঠন হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুভাষবাবু মন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় তাঁকে আর রাজ্য পার্টির কোনও সাংগঠনিক পদে নাও রাখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন করে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ও তার প্রধান খুঁজতে হবে গেরুয়া পার্টিকে।