হরেক রকম মেনুর সম্ভার নিয়ে প্রস্তুত শহরের রেস্তরাঁগুলি
পুজো আর পেটপুজো হাত ধরাধরি করে চলে। আর দুর্গাপুজো তো বাঙালির সেরা উৎসব। তাই স্মরণাতীত কাল থেকেই দুর্গাপুজোর সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। একটা সময় রাজবাড়ি, জমিদারবাড়িতে পুজো হতো। আমন্ত্রিত থাকতেন বিদেশি শাসকরাও। তাঁদের তুষ্ট করতে অনেকে অতি উৎসাহে ‘ম্লেচ্ছ’ খানাপিনার আয়োজন করতেন বলেও শোনা যায়। এছাড়া চিরাচরিত ভোগ তো রয়েছেই। সেই ধারা চলছে। এবার বেশ কিছু জায়গায় ভোগের ব্যবস্থা থাকলেও করোনার জন্য ভিড় করে খাওয়াটা এড়িয়েই যেতে চাইছেন অনেকে।
ভোগের বিকল্প নেই। তবে, রসনাতৃপ্তির বিকল্প রয়েছে। নানা রেস্তরাঁ এবং হোটেল তাদের পানাহারের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে কলকাতার আনাচ-কানাচে। প্রত্যেকেই দাবি করছে, পরিচ্ছন্নতা বিধি এবং দূরত্ববিধির সঙ্গে কোনও আপস করছে না তারা। তাই, নিশ্চিন্তেই উদরপূর্তির পালা চলতে পারে। এবার দেখা যাক, কোন রেস্তরাঁ কেমন আয়োজন করেছে। যদি, বেহালার দিকে ঠাকুর দেখতে থাকেন, আর ডানহাতের কাজটাও সেখানে সারার ইচ্ছা থাকে, তাহলে ঢুঁ মারতে পারেন সাওস কিচেনে। প্রন হার গাও, শেফস স্পেশাল ক্রিসপি বাটার চিলি গার্লিক প্রনস, চিকেন ডান, ডান নুডল সুপ, সাওস স্পেশাল ব্ল্যাক পেপার ল্যাম্ব, কুঙ পাও পর্ক স্পেয়ার রিব, ফিশ সল্ট অ্যান্ড পেপার প্রভৃতি চিংড়ি, মাছ, চিকেন এবং রেড মিটের হরেক পদ থাকছে। দু’জনের জন্য জিএসটি ছাড়া ন্যূনতম ৬০০ টাকা (জিএসটি ছাড়া) খরচ হবে। যদি কসবা থেকে রাসবিহারীর মধ্যে পুজো দেখতে থাকেন বা যোধপুর পার্ক এলাকার পুজো গন্তব্য হয়, তাহলে গোলপার্কে ট্রাইব-এ চলেই আসতে পারেন। ইংলিশ ফিশ অ্যান্ড চিপস উইথ বিয়াল ব্যাটার, ডিপটাও তাদের নিজেদের বানানো। এছাড়া রয়েছে চিকেন স্ট্রোগানভ, পর্ক ভিন্ডালু উইথ বাটার রাইস, চিকেন জাকুতি উইথ রাইস, কলকাতা স্পেশাল পর্কের পদ, ভেটকি মেনিয়ার, ফিশ ফ্লোরেন্টাইনের মতো মেনু। কর্তৃপক্ষের দাবি, এখানে এলে স্মৃতির সরণি বেয়ে পুরনো কলকাতার ফ্লেভার পাবেন অতিথি এবং ভোজনরসিকরা। এখানেও দু’জনের খাওয়ার খরচ ৬০০ টাকা (জিএসটি ছাড়া) থেকে শুরু।
স্রেফ বন্ধু, পরিজন নিয়ে লাঞ্চ বা ডিনার সারতে আসতেই পারেন পার্ক স্ট্রিটের বহু পরিচিত ট্রিঙ্কাস-এ। এই এলাকায় পুজো সেভাবে না থাকায় ভিড়ও কম থাকবে। তন্দুরি, কন্টিনেন্টাল, চেলো কাবাব, সিজলার—সবরকম পদ হাজির তাদের মেনুতে। লবস্টার থার্মিডর, ডেভিলড ক্র্যাব বা চিকেন আ লা কিয়েভের মতো তাদের বিখ্যাত পদগুলি উৎসবের দিনগুলি মাতাতে তৈরি। কাছেই রয়েছে হার্ডরক ক্যাফে। দুর্দান্ত সব স্ন্যাকস এবং পানীয় সহযোগে সন্ধ্যাটা কাটাতে এর জুড়ি নেই। আরেকটু এগলেই, মির্জা গালিব স্ট্রিটে পতাকা হাউসের কাছে আউটলেট খুলেছে করিমস কলকাতা। মটন কিমা বিরিয়ানি, করিমস স্পেশাল দম বিরিয়ানি, চিকেন পেশোয়ারি টিক্কার মতো মোগলাই এবং ভারতীয় খানার পদগুলি পুজো জমিয়ে দিতে বাধ্য। আবার দক্ষিণের দিকে এগিয়ে গেলে শেক্সপিয়র সরণির অ্যাস্টর হোটেল পদগুলি সাজিয়েছে হাঁদা-ভোটা, নন্টে-ফন্টে, ঠাকুমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড় প্রভৃতি নামে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও মজা পাবে। এছাড়াও, মোগলাই খানায় আউধ ১৫৯০, চাইনিজে চাউম্যানের বিভিন্ন আউটলেটগুলি শহরের বিভিন্ন জায়গায় তো রয়েছেই।
একটু চেনা গণ্ডি পেরিয়ে দুঃসাহসী হতে চাইলে বা বোনাসের টাকার বেশ খানিকটা বড় হোটেলের রেস্তরাঁয় খেতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে তাজ বেঙ্গলের সোনারগাঁও, কিউমিন, ক্যাল-২৭। পদ অনুযায়ী দু’জনের জন্য ২০০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা (কর ছাড়া) ন্যূনতম খরচ হবে। তবে, বিভিন্ন ডিশ চেখে দেখতে চাইলে খরচ আরও অনেক বাড়বে। বাইপাসে রুবি মোড়ে তাজের ভিভান্তা হোটেলেও রয়েছে মিন্ট। এখানেও খরচ ন্যূনতম ১,৭৫০ টাকা। পদ অনুযায়ী তা বাড়বে।