রাস্তায় মানুষের ঢল আটকাতে এবার অনলাইন লাইভে পুজো দেখাবে শ্রীভূমি, চেতলা অগ্রণী
প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছে শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজো মণ্ডপ (Sreebhumi Sporting Puja)। ফলে যারা নবমী-দশমীতে বুর্জ খলিফার মণ্ডপ (Burj Khalifa Puja Pandal) দেখবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, তাঁরা সকলেই মুষরে পড়েছেন। এবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই পুজো মণ্ডপ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন উৎসবপ্রিয় মানুষ। কিন্তু, শেষবেলায় এসে সেই শখ অধরাই রয়েছে গেল। তবে, দর্শনার্থীদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করতে অন্য উপায় বের করল পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। মণ্ডপে নো-এন্ট্রি থাকলেও এবার ঘরে বসেউ বুর্জ খলিফার দর্শন করতে পারবেন সকলে। তার জন্য ২৪X৭ নন স্টপ ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে লাইভ স্ট্রিমিং করা হচ্ছে। মণ্ডপে না গিয়েও বুর্জ খলিফার মণ্ডপ লাইভ দেখতে পাবেন দর্শকরা।
এ প্রসঙ্গে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে শ্রীভূমির পুজো দেখতে পারবেন দর্শকরা।’ এ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে নন স্টপ লাইভ স্ট্রিমিং করা হচ্ছে। গত চতুর্থীর দিন থেকেই আমরা দর্শকদের জন্য এই লাইভের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেবলমাত্র রাত ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত লাইভ বন্ধ থাকে। তাছাড়া বাকি দিন পুজোর সমস্ত আচার দেখানো হচ্ছে লাইভে। প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে মণ্ডপ বন্ধ হওয়ায় তাই আরও বেশি করে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের উপর জোর দিচ্ছেন কর্তারা। এদিন নবমীর হোমপুজো সরাসরি ফেসবুক এবং ইউটিউবে দেখানো হয়।
প্রথম থেকেই মন্ত্রী সুজিত বসুর (Sujit Basu) এই পুজোকে ঘিরে এক আলাদাই উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল উৎসবপ্রিয় মানুষের মধ্যে। দিন দিন বেড়ে চলা জনপ্লাবনে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছিল। বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে অবশেষে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হল এই মণ্ডপে। অষ্টমী শেষে মধ্যরাতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেই এ কথা ঘোষণা করেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক সুজিত বসু। প্রথমে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় আঙুল উঠেছিল মণ্ডপের গায়ে লাগানো লেজার লাইটের উপর। চিঠিও পৌঁছেছিল এই নিয়ে। যদিও উদ্যোক্তারা তা অস্বীকার করেন। তবে সপ্তমীর সন্ধ্যায় রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় বুর্জ খলিফার লেজার আলোর প্রদর্শনী। অষ্টমীর বিকেল থেকে ভিড় যেন সব রেকর্ড ছাপিয়ে যায়। কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে লেকটাউন-উল্টোডাঙা চত্বরের যান চলাচল। আর এবার মণ্ডপের দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হল দর্শনার্থীদের জন্য। দর্শনার্থীদের জন্য প্যান্ডেল বন্ধ হলেও শ্রীভূমিতে পুজোর বাকি কাজ চলবে নিয়মমাফিকই।
এ প্রসঙ্গে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘আজ এবং আগামী কয়েকদিন শ্রীভূমিতে বাইরের দর্শকের প্রবেশ বন্ধ। তবে স্থানীয় মানুষরা বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে মণ্ডপ চত্বরে যেতে পারবেন।’
মণ্ডপ, প্রতিমা, পুজোর (Durga Puja 2021) যাবতীয় উপাচার এমনকি সেলিব্রিটি দর্শন। এর সবকিছুই দেখুন বাড়িতে বসে এক ক্লিকে। পুজোর শুরু থেকেই এই ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে শহরের অন্যতম হাই প্রোফাইল নামজাদা পুজো চেতলা অগ্রণী। ইতিমধ্যেই হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বড় পুজোর ১০ মিটার দূরত্বের বাইরে থাকতে হবে দর্শনার্থীদের। চেতলায় সেই ব্যবস্থা করা আছে। করোনার ভয়ে যারা পুজোর সময়ে চেতলা অগ্রণীর ঠাকুর দেখতে পারবেন না বলে মনে মনে দুঃখ পাচ্ছিলেন, তাঁদের জন্যে এটা খানিকটা সুখবর।
পুজো উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ঘরে বসে মিলবে একেবারে মণ্ডপেরই স্বাদ। কোনও ছোটখাটো মুহূর্ত বাদ দেওয়া হবে না ঘরে বসে থাকা মানুষদের জন্যে। যাতে কারও মনে না হয় সে প্যান্ডেলে নয়, বাড়িতে বসে ঠাকুর দেখছে। উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে চেতলা অগ্রণীর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে সবটাই সম্প্রচারিত হবে। এছাড়া ফেসবুক লাইভ দেখা যাবে টানা। ২৪ ঘণ্টাই এই টানা লাইভ সম্প্রচারের জন্যে, চারটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যার মাধ্যমে এই লাইভ দেখানো হবে। মাতৃবন্দনার কোনও কিছুই এতে বাদ যাবে না বলে জানানো হয়েছে উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে।
এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ও বহু বিদেশি এই মণ্ডপ দেখতে আসেন। এবারে করোনার কারণে তাঁরা অনেকেই আসতে পারছেন না। ফলে তাঁদের কথা ভেবে আমরা এই লাইভ সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ডিজিটালি ঘরে বসেও যাতে এর স্বাদ সকলে নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।” অন্যদিকে কোভিড সংক্রমণ রুখতে যারা দর্শনার্থী আসবেন তাঁদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেবে চেতলা অগ্রণী ৷ প্রায় দশ হাজার প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে ভোগ নেওয়া কোন পরিবার কখন আসবে তার শিডিউল আগে থেকেই ক্লাব জানিয়ে দেবে। সেই সময়ে অনুযায়ী তাঁরা আসবেন। যাতে ভিড় না হয় তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু চেতলায় একাধিক ব্লক আছে। তাই ব্লক ধরে ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এবছর চেতলা অগ্রণীতেও দূরত্ব মেনে প্রতিমা বরণ করবেন মহিলারা। পুজোর থিম ঘোষণার দিন থেকেই চমক দিয়েছিল চেতলা অগ্রণী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিমার চক্ষুদান করেন। আর করোনা আবহ কাটিয়ে কীভাবে পুজো করা যায় সেই দিক তুলে ধরতে চাইছে চেতলা অগ্রণী। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে জোর দেওয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তা ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, বাইরে রাস্তায় নেমেও ঠাকুর দেখা যায়। ঘরে বসেও ঠাকুর দেখা যায়। আমরা দুটোর স্বাদ দিতে চাইছি।