রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

অষ্টমীর রাতে ঠাকুর দেখতে বেরোনো মাস্ক বিহীন ভিড় চিন্তা বাড়ালো

October 14, 2021 | 3 min read

অতিমারি পরিস্থিতি কিংবা ভ্যাপসা গরম, কেউই ভিড়ের উচ্ছ্বাসে বাধা হতে পারল না! অষ্টমীর সন্ধ্যায় জনস্রোত যেন তরঙ্গের মতো আছড়ে পড়তে লাগল কলকাতায়। শুধু কলকাতা কেন, বিভিন্ন জেলা শহরের পথেঘাটেও একই ছবি! ভিড়ের মধ্যে মাস্কবিহীন মুখের সংখ্যাই বেশি। কোভিড পরিস্থিতিতে এই বেপরোয়া ভিড় নিয়ে চিকিৎসক কিংবা জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানীরা শিউরে উঠলেও মানুষের মনে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

বস্তুত, অষ্টমীর সন্ধ্যায় বেপরোয়া ভিড়ের চেহারা কেমন হবে তা যেন সকাল থেকেই বোঝা গিয়েছিল। মণ্ডপে-মণ্ডপে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে ভিড় জমেছে। মাস্ক না-পরেই লোকজন অঞ্জলি দিয়েছেন, নিজস্বী বা সেলফি তুলেছেন। নিয়মমাফিক নো-এন্ট্রি জ়োনের গা ঘেঁষে চলেছে পুজোর আড্ডা। মহানগর, জেলা শহর বা শহরতলির পুজোকর্তারা বলছেন, হাই কোর্ট মণ্ডপে ঢুকতে নিষেধ করেছে, নো-এন্ট্রি জ়োন করতে বলেছে। তার বাইরে তো কোনও বিধি নিষেধ নেই। বস্তুত, নিয়মের ফাঁক গলেই আড্ডা, জমায়েত হয়েছে। তবে নিয়মে না-আটকালেও পুজো কর্তাদের শুভ বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

কলকাতায় মণ্ডপে তুলনায় কম ভিড় হলেও শহরতলি, জেলা শহর কিংবা গ্রামে, অষ্টমীর অঞ্জলিতে কার্যত কোনও নিয়ম বা নির্দেশের তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। হাই কোর্ট নির্দেশিত প্রতিষেধকের দুটি ডোজ়ের শংসাপত্র যাচাই তো দূর অস্ত, সামান্য মাস্ক পরতে বলার জন্যও পুলিশ বা পুজো কর্তাদের কাউকে দেখা যায়নি। স্যানিটাইজ়ার কিংবা মাস্ক বিলি করতেও দেখা যায়নি। খুব কম জায়গাতেই এক এক বারে কম পুণ্যার্থী নিয়ে দফায় দফায় অঞ্জলির ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ি থেকে অঞ্জলির ফুল আনার পরামর্শ দেওয়া হলেও অধিকাংশ জায়গায় মণ্ডপ থেকেই ফুল নিয়ে দর্শনার্থীদের অঞ্জলি দিতে দেখা গিয়েছে।

অনেকেই বলাবলি করেছেন, সুগন্ধী এবং নতুন পোশাকের গন্ধে উবে গিয়েছে কোভিড বিধির কড়াকড়ি! এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উৎসব পালন হল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অনেকেরই আর্জি, নির্দেশ না-মানার জন্য প্রশাসন এবং পুজো কর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক আদালত।

সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। বিকেল হতেই জনস্রোত এসে পড়েছে শহরে। শিয়ালদহ স্টেশন কিংবা মেট্রো স্টেশন থেকে দলে-দলে লোক হাঁটা দিয়েছেন মণ্ডপের উদ্দেশে। শহরতলি বা জেলা থেকে শহরের দিকে অবিরাম গাড়ির সারি আসতে দেখা গিয়েছে।

ভিড়কে প্রশ্রয় জোগানোর জন্য ইতিমধ্যেই বিদ্ধ হয়েছে লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। কলকাতার বহু পুজো কমিটিকেও নিয়মের ফাঁক গলে ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে। উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি সর্বজনীনের মণ্ডপের সামনে থিকথিকে ভিড়। এক দিকে নো-এন্ট্রি। কিন্তু প্রতিমা দর্শনের জন্য যে দিক খোলা রাখা হয়েছে সেখানে পা ফেলাই দায়। হিসাব অনুযায়ী, মণ্ডপের বাইরে হলেও ওই ভিড় থেকে কি কোভিড ছড়াবে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। একই পরিস্থিতি উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বহু পুজো মণ্ডপের বাইরেও। সন্ধ্যায় হাতিবাগান, শ্যামবাজার, শোভাবাজার, আহিরিটোলা চত্বরে একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়েছে। পুজোকর্তাদের অনেকে এই ভিড় দেখে উৎফুল্ল হলেও হাতেগোনা কয়েকটি পুজো কমিটির কর্তাদের আক্ষেপ, উৎসবকে ভিড় টানার লড়াইয়ে পরিণত করে সমাজের বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে। শুধু মণ্ডপ নয়, খাবার স্টল বা রেস্তোরাঁগুলিতেও নাম কা ওয়াস্তে কোভিড বিধি মানা হয়েছে বলে অভিযোগ।

বিকেলে ঠাকুর দেখার ভিড়েও বিধি মানা হয়নি রাজ্যের নানা প্রান্তের অনেক জায়গাতেই। শহর এলাকার পুজোগুলিতে এ দিন ভালই ভিড় হয়। তবে দু’একটা ব্যতিক্রম বাদে গ্রামীণ এলাকার পুজোয় তেমন ভিড় ছিল না। বিভিন্ন খাবারের স্টল, রেস্তরাঁয় বিকেল থেকেই ভিড় হয়। সেখানেও মানা হয়নি কোভিড বিধি।

গ্রামীণ হাওড়া, আসানসোল, বর্ধমান, বহরমপুর, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি-সহ বেশ কিছু জায়গায় অবশ্য মাস্ক পরা নিয়ে মাইকে সতর্ক করা হয় পুজো কমিটির তরফে। বিভিন্ন মণ্ডপে অঞ্জলির মন্ত্র পড়ার মাঝে পুরোহিতও মাস্ক পরতে ভক্তদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তা শুনেছেন কম মানুষ। বাঁকুড়ার ইঁদারাগড়া হরেশ্বরমেলা কমিটির সম্পাদক রমেশ মুরারকা বলেন, ‘‘দূর থেকেই মানুষজন অঞ্জলি দিয়েছেন।’’ আবার, কোচবিহারের বড় দেবী বাড়ি মন্দিরের সামনে মাস্ক ছাড়াই ভিড়ে ঠাসাঠাসির ছবি দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির সেন্টাল কলোনি, জাতীয় শক্তি সংঘ, দেশবন্ধুপাড়া দাদাভাই ক্লাবেও ছিল একই ছবি।

জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ, ইংরেজবাজার, আলিপুরদুয়ার, তুফানগঞ্জ, ইটাহার, দিনহাটার মতো জায়গাতেও বিধি ভাঙার অভিযোগ রয়েছে। চাচল এবং গাজোলের মতো এলাকায় ব্যাপক ভিড় হয় মণ্ডপগুলিতে।

বাঁকুড়ার জয়রামবাটীর মাতৃমন্দিরের ভিতরে এ দিন বিধি মেনে কুমারী পুজো হয়। ভক্তদের মন্দিরের বাইরে থেকেই দর্শন করতে বলা হয়। কাউকে বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। এ বার প্রসাদ বিলিও বন্ধ রাখা হয়। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি পার্ক মোড়, দাদাঠাকুর মোড় ও বাস স্ট্যান্ডে পুলিশ মাস্ক বিলি করেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

আজ, নবমী। উৎসবের শেষ রাত। গত কয়েক দিন ভিড় দেখে প্রশাসনের একাংশের অনুমান, গাঙ্গেয় বঙ্গের কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও শেষ লগ্নেও জনস্রোত আটকাবে না। এক পুলিশকর্তার কথায়, “ভয়াবহ অতিমারিকে তোয়াক্কা করে না যারা, তারা সামান্য বৃষ্টিকে ভয় পাবে?”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga puja, #crowd, #Ashtami, #durga Pujo

আরো দেখুন