বহুদিন পর হাতির উপদ্রবহীন শারোদৎসবের সাক্ষী থাকল জঙ্গলমহল
অনেক বছর পর হাতির উপদ্রবহীন শারোদৎসব দেখল জঙ্গলমহল। আর এই কাজের জন্য যাবতীয় কৃতিত্ব পাচ্ছে ‘হুলাপার্টি’ (হাতি তাড়ানোর কাজে নিযুক্ত বনকর্মীর দল, স্থানীয় স্তরে এই নামেই পরিচিত)। বন দপ্তরের অধীনে হুলাপার্টির সদস্যরাই হাতি তাড়ানোর কাজ করেন জঙ্গলমহলে। এ বারের পুজোয় নিজেদের ছুটির পরোয়া না করে দিন রাত বনের অন্দরে কিংবা বাইরে হাতির দলের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেছেন তাঁরাই। তাই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভুমের একাংশে পুজোর দিনগুলিতে হাতিদের হামলা হয়নি। এমনটা না হওয়ায় হুলাপার্টিকেই কৃতিত্ব দিচ্ছে বন দপ্তর। রাজ্য সরকারের পক্ষে হাতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করেন বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। তাঁর বাড়ি ও বিধানসভা কেন্দ্র ঝাড়গ্রামেও এ বারের দুর্গাপুজোয় গজরাজদের তাণ্ডব লক্ষ করা যায়নি বলেই জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
এই কাজে হুলাপার্টির ভুমিকার কথাই জানিয়েছেন তিনিও। বীরবাহার কথায়, ‘‘পুজোর সময় হাতির হানা রুখতে বন দপ্তরের আধিকারিকরা যেমন ছুটি নিতে পারেননি, তেমনই হুলাপার্টির লোকজনও ছুটি নেননি। বনের কাছ থেকেই হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে জঙ্গলমহলকে শান্তিতে রেখেছিলেন তাঁরাই। তাই অনেক বছর পর জঙ্গলমহলবাসী নিশ্চিন্তে দুর্গাপুজোয় অংশ নিতে পারলেন।’’ তবে পুজোর ঠিক আগেই বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়ার পাবয়ার জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছিল শ’খানেক হাতির একটি দল। তাতে উদ্বেগ বেড়েছিল বন দপ্তরের। সঙ্গে আতঙ্কে ছিলেন জঙ্গল লাগোয়া ওই এলাকার বাসিন্দারাও। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও কল্যাণ রাই তিনটি বিশেষ দল গঠন করে দ্রুত বিভিন্ন পয়েন্টে কড়া পাহারার নির্দেশ দেন। প্রস্তুত রাখা হয় এলিফ্যান্ট ম্যানেজমেন্ট টিমও। সঙ্গে বনের অন্দরে হাতিদের গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু করে হুলাপার্টি। এমন কড়া পদক্ষেপেই মেলে সাফল্য। পুজোর দিনগুলিতে বড়জোড়ার ওই বন লাগায়ো এলাকায় উপদ্রব করেনি হাতির দলটি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে সময়ে অসময়ে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে একাধিক বার আচমকাই হানা দিয়েছে হাতির দল। তার ফলে ওই জেলার জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত হয়েছে তেমনই, ক্ষেতের ফসল থেকে শুরু করে গাছের ফল খেয়ে কৃষিজীবীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে হাতিরা। সে সময় হাতির দাপট থেকে রেহাই পায়নি বসতবাড়িও। গত কয়েক বছর ধরে পুজোর সময়েও অব্যাহত থাকত হাতির পালের হানা। এর জন্য অবশ্য হস্তী বিশেষজ্ঞরা জঙ্গলের অন্দরে খাবারের অপ্রতুলতাকেই দায়ি করেছেন। হাতিরা নিজেদের নির্দিষ্ট পথ ছেড়ে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দেয় তারা। কিন্তু এ বারের শার়োদৎসবের সময়ে হাতির দলকে বাগে আনতে আগে থেকেই পদক্ষেপ করেছিল বন দপ্তর। সঙ্গে সক্রিয় রাখা হয়েছিল হুলাপার্টিকে। আর তাতেই মেলেছে এমন সাফল্য। জানাচ্ছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরাও।