পুজোর সময়ে ব্যবসারও রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে রেস্তরাঁগুলি
দর্শকদের জন্য ‘নো এন্ট্রি’ ছিল দুর্গোৎসবের (Durga Puja 2021) মণ্ডপ। বাইরে থেকে দেখা গেলেও, ভিতরে ঢোকার অধিকার হারিয়ে অনেকেই মণ্ডপমুখী হননি। তাঁর বদলে রেস্তরাঁমুখী হয়েছিলেন। তাতেই শুধু গত বছরের পুজোর রেকর্ড নয়, অতিমারী শুরুর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-এর পুজোর সময়ের ব্যবসারও রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে রেস্তরাঁগুলি।
শহর কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলি তো বটেই, গোটা রাজ্যেরই রেস্তোরাঁগুলি লক্ষ্মীর মুখ দেখেছে। যেভাবে ব্যবসা বেড়েছে, সেভাবেই বেড়েছে খাবারের দামও। জানা গিয়েছে, কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় অন্ততপক্ষে ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে। যা রেকর্ড ভাঙা ব্যবসার পিছনে অন্যতম কারণ। প্রতি বছরের মতোই এবারও পুজোয় ভাল ব্যবসার আশা করেছিল রেস্তোরাঁগুলি। কিন্তু যে পরিমাণ ব্যবসা দুর্গোৎসবে হয়েছে তা আশাতীত বলেই জানাচ্ছেন রেস্তরাঁ মালিকরা। সেজন্যই তো সপ্তমীতে রাত ১১টাতেই রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল সুদেশ পোদ্দারকে। মন্থন, এমএস বার অ্যান্ড লাউঞ্জ এবং সঙ্ঘাই নামের তিনটে রেস্তোরাঁ মালিক এবং হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট তিনি। সুদেশবাবু বলেন, ‘‘সপ্তমীর দিন আমাদের সব খাবার শেষ হয়ে গেল রাত ১১টার সময়। বন্ধ করে দিতে হল। ভাবতেই পারিনি এত ভিড় হবে, এত লোক আসবে। আশা ছিল ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু, আমরাও এতটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’’
সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের রংপ্লেস, পার্ক স্ট্রিটের মোকাম্বো, পিটার ক্যাট, আওধ-১৫৯০, আমিনিয়া-প্রায় সব রেস্তরাঁই ভেঙেছে রেকর্ড। সুদেশবাবুর বক্তব্য, ‘‘এবছর যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে বিগত ২৫ বছরে এই বিক্রি দেখিনি কোনও দিন। আমার নিজের খুব ভাল ব্যবসা হয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে যতগুলো রেস্তরাঁ আছে সবাই নিজের নিজের রেকর্ড ভেঙেছে এবছর। শুধু কলকাতা নয়, পুরো রাজ্যেই এই চিত্র দেখা গিয়েছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে যা ব্যবসা হয়েছিল তার থেকে ২০২১ সালে গড়ে ৩০ শতাংশ বেশি ব্যবসা হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ৫০-৫৫ শতাংশ বেশি হয়েছে ব্যবসা।
আওধ-১৫৯০, চ্যাপ্টার-টু এবং চাওম্যান রেস্তোরাঁর কর্ণধার শিলাদিত্য চৌধুরির কথায়, ‘‘এবছরের পুজোটা সব থেকে ভাল ছিল। যখন কোভিড ছিল না তার থেকেও ভাল। পুজোর সময় যা ব্যবসা হত তার থেকে ১৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।’’ শরৎ বোস রোডের মার্কো পোলো রেস্তরাঁর ম্যানেজার কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পার্ক স্ট্রিট ও শরৎ বোস রোডের দুটি শাখাতেই ব্যবসা ২০১৯-এর কাছাকাছি গিয়েছিল এবার। অতিমারীর আবহে এটা রেকর্ড ব্রেকিং।’’
মণ্ডপে ঢোকায় বাধার কারণেই মানুষ বেশি রেস্তোরাঁমুখী হয়েছিলেন বলে মনে করছেন রেস্তরাঁ মালিকরা। সুদেশ পোদ্দার জানিয়েছেন, সব থেকে বেশি মানুষ এসেছিলেন নবমীতে। ওইদিন এমএস বার অ্যান্ড লাউঞ্জে সকাল থেকে ৭০০-৮০০ জনকে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। এক থেকে দেড়শো জনকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল ওই দিন। শিলাদিত্যবাবু বলেন, ‘‘মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে এসেছিলেন। অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়। সপ্তমী ও নবমীতে এক একটা আউটলেট থেকে গড়ে এক থেকে দেড়শো মানুষ ফিরে গিয়েছিলেন।’’